ভিডিও সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫

গৃহযুদ্ধের মাঝেই মিয়ানমারে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

ছবি : সংগৃহীত,গৃহযুদ্ধের মাঝেই মিয়ানমারে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের বহুল প্রতিশ্রুত জাতীয় নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সামরিক জান্তা সরকার। সোমবার দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এক বিবৃতিতে নির্বাচনের ওই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশজুড়ে চলমান গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরোধীদের প্রতিরোধের ঘোষণার মাঝে এই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা ‘প্রহসন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

২০২১ সালে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। সেই সময় দেশটির সামরিক বাহিনী অং সান সুচির বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। যদিও এই অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ; যা এখনও চলছে। 

বিদ্রোহী ও গেরিলা গোষ্ঠীগুলোর কাছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সামরিক জান্তা। গণতন্ত্রপন্থী গোষ্ঠী ও শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলো এসব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে এসব সংগঠন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের ক্ষমতা ধরে রাখা। তিনি প্রেসিডেন্ট, সামরিক প্রধান অথবা নতুন কোনও পদে থেকে নিজের প্রভাব বজায় রাখবেন।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘‘কেবল সামরিক স্বৈরশাসকদের ক্ষমতায় রাখার জন্যই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনগণের জন্য এই নির্বাচনের কোনও গুরুত্ব নেই।’’ নিরাপত্তাজনিত কারণে ৬৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।


জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরাও এই নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি কেবল সামরিক শাসনকে নতুনভাবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা। কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে মিয়ানমারে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া চলমান এই সংঘাতে দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের কবলে পড়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩৫ লাখের বেশি।

নির্বাচনের আগে সামরিক জান্তা বলেছে, দেশে সংঘাত শেষ করার একমাত্র পথ নির্বাচন। দেশটির বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সামরিক বাহিনী। অস্ত্র জমাকারীদের নগদ অর্থ পুরস্কারেরও ঘোষণা দিয়েছে জান্তা।

দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য মান্দালয়ের বাস্তুচ্যুত এক নারী বলেছেন, ‘‘আমরা দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে পেতে চাই। যদি নির্বাচনের ফলে দেশ আরও স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ হয়, তাহলে আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।’’

আরও পড়ুন

যদিও দেশটির গণতন্ত্রপন্থি শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি কারাগারে বন্দি আছেন। অন্যদিকে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত বিরোধীদলীয় বহু আইনপ্রণেতা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ‘‘প্রতারণা’’ বলে অভিহিত করেছেন; যার উদ্দেশ্য অব্যাহত সামরিক শাসনকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা।

মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আগামী ২৮ ডিসেম্বর, রোববার সংসদীয় প্রত্যেক আসনের জন্য বহু দলীয় গণতান্ত্রিক সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপ শুরু হবে। পরবর্তী ধাপগুলোর তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে।’’

তবে নির্বাচনের সময় দেশজুড়ে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংঘাত পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। গত জুলাইয়ে দেশটির জান্তা সরকার নতুন একটি আইন প্রণয়ন করেছে। এই আইনে নির্বাচনের সমালোচক কিংবা বিক্ষোভকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া ব্যালট পেপার বা ভোটকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত করা, ভোটার, প্রার্থী বা নির্বাচনকর্মীদের ভয় দেখানো বা ক্ষতি করার অপরাধে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং বর্তমানে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই সেনাশাসনের অধীনে ছিল দেশটি।

অভ্যুত্থানের প্রথমদিকে বিচ্ছিন্নভাবে লড়াই করা দেশটির বিদ্রোহী ও জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো তেমন সাফল্য পায়নি। তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে সমন্বিত আক্রমণ চালিয়ে দেশের বেশ কয়েকটি এলাকা দখলে নেয় এসব গোষ্ঠী। জবাবে বিদ্রোহী ও বিরোধীগোষ্ঠীগুলো অবস্থান ও নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায় জান্তা।

একই সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক সেবা চালু করে হাজার হাজার তরুণকে নতুন সৈন্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে জান্তাবাহিনী। গত বছর নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে করা এক জনশুমারিতে দেশটির ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার মাঝে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র: এএফপি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিন শর্তে মিলবে পিতৃত্বকালীন ছুটি

পাবনার ফরিদপুরে আগুনে পুড়ল ৮টি ঘর

শার্শায় ভাবিকে ধর্ষণচেষ্টায় স্পর্শকাতর অঙ্গ হারালেন দেবর

ডাকসুতে ২৮ পদের বিপরীতে ৫৬৫টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি

মুকাকুর এই সময়

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক ২