মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম রাফি (২৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিহতের ছোট ভাই হত্যাকারী মাদরাসাছাত্রকে।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা এবং তার ঘরের খাটের নিচ থেকে তার রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়েছে। আলোচিত এ হত্যকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় গতকাল রবিবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
আজ সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, পুলিশ প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করেন। পুলিশ গোপন সোর্স, তথ্যপ্রযুক্তি, এলাকাবাসীর বক্তব্য এবং আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় নিহতের ছোট ভাইকে (১৬) ঘটনার দিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রী এবং আশপাশের মানুষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
কিন্তু তখনও হত্যার কথা স্বীকার করেনি। পরে দুপুরে ভাইয়ের জানাজার নামাজে শরিক হলে সেখানে এলাকাবাসীর কান্নার রোল দেখে ছোট ভাই রানার মন ভেঙে যায়। সেও কাঁদতে থাকে। সেখান থেকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রবিবার সন্ধ্যায় সে তার ভাইকে ঘুমের মধ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত জানায়, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ৮ আগস্ট রাত অনুমানিক ৮টার সময় তার বড় ভাই রাফির কাছে সে ৫০০ টাকা চায়। রাফি ছোট ভাইকে টাকা না দিয়ে গালিগালাজ এবং দুর্ব্যবহার করেন। এই ঘটনায় বড় ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। পরের দিন ৯ আগস্ট সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ঘাতক ছোট ভাই দেখে তার মা বাড়িতে নাই। বাড়িতে স্ত্রী না থাকায় সেদিন ঘরের দরজা খোলা রেখেই রাফি ঘুমিয়ে ছিল।
এ সুযোগে আগের রাতের ঘটনায় ভাইয়ের ওপর রাগ হয়ে খাটের নিচে থাকা ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় বড় ভাই রাফিকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর ছোট ভাই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা বেসিনে ধুয়ে পরিষ্কার করে পুনরায় খাটের নিচে রেখে দেয় এবং তার পরনে থাকা রক্তমাখা লুঙ্গিও খাটের নিচে রেখে দেয়।
অভিযুক্তের বরাতে পুলিশ জানায়, ঘটনার পর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে থাকে। শুধু ৫০০ টাকা না দেওয়াই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে একমাত্র কারণ নয়। রাফির বাবার স্বপ্ন ছিল ছোট ছেলেকে মাদরাসায় পড়াশোনা করবে, আলেম হবে। কিন্তু তার পড়াশোনার প্রতি উদাসীনতা ছিল। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই হিসেবে রাফিই ছিল ছোট ভাইয়ের অভিভাবক। রাফি চায়, ছোটভাই বাড়িতে না থেকে মাদরাসা থেকে পড়াশোনা করবে। কিন্তু তার ভাই মাদরাসায় না থেকে বাড়িতেই বেশি থাকত। এসব কারণে অভিভাবক হিসেবে রাফি প্রায়ই তার ছোট ভাইকে শাসন করত। কিন্তু বড় ভাইয়ের শাসন সে মেনে নিতে পারেনি। এছাড়া রাফি পরিবারের অমতে প্রেম করে বিয়ে করে। এই বিয়েতে রাফির পরিবার বা আত্মীয়স্বজন কারোরই মত ছিল না। বিয়ের পর থেকে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাফির স্ত্রীর সঙ্গে রাফির মা ও ভাইয়ের কিছু টানাপোড়নও ছিল। প্রায়ই দেবর-ভাবি এবং ভাইয়ের সঙ্গে পারিবারিক অশান্তি বিরাজ করত। এসব নিয়ে বড় ভাইয়ের ওপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে ছোট ভাইয়ের। যেটা শেষ পর্যন্ত হত্যার মাধ্যমে শেষ হয়।
আরও পড়ুন
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মাহফুজুর কবির জানান, এ ব্যাপারে মা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।