দেশের সবচেয়ে বড় ‘আনার’ বাগান দিনাজপুরে

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি : এক একটি গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় আনার। প্রথম দেখায় এটি নেপাল বা ভারতের কাশ্মির মনে হলেও এটি বাংলাদেশের আনার বাগান। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে না হলেও দিনাজপুর সদর উপজেলার বেলবাড়ীতে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ আনার বাগান। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেই পেয়েছে সফলতা। একটি বাগানের ১১’শ গাছ থেকে এবার অন্তত ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার আনার বিক্রির আশা করছেন তারা।
নেপাল, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশ থেকে প্রতিবছর শত শত টন ফল বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি করা হয়। তবে এবারই প্রথম বৃহৎ আঙ্গিকে বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে আমদানি নির্ভর এই ফল আনার। বাগানে চারা রোপণের ৪ বছর পর এবার ফল এসেছে গাছে গাছে। ইতিমধ্যে ফলে ফলে ভরে গেছে গোটা বাগান। একেকটি গাছে ফল ধরেছে ২০ থেকে ৬০টি। চলতি আগস্ট মাসের শেষ দিকেই এসব ফল বিক্রি করতে শুরু করবে বাগান মালিক।
দিনাজপুরের সদর উপজেলার রানীগঞ্জ বেলবাড়ী এলাকায় পৌঁছালে মূল সড়কের পাশেই গ্রীন লিফ এগ্রো ফার্ম নামের বিশাল একটি আনার বাগানের দেখা মিলবে। মোহাম্মদ নাদিম ও মনিরুজ্জামান চৌধুরী দুই বন্ধুর প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন আনার বাগানটি। সাড়ে তিন একর জমির উপরে এখানে আনারের গাছ রয়েছে ১১’শ টি। গত বছর আনার তেমন একটা না ধরলেও স্বাদ, ঘ্রাণ, রঙ এবং আকার সবদিক থেকেই বিদেশি আনারের চেয়ে কোন অংশে কম নয় বলে দাবি বাগান মালিকেরা।
আনার চাষের ওপর ভারতের মুম্বাইয়ের একটি কৃষি খামারের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে দিনাজপুরে চার বছর আগে আনার বাগান করেন কৃষি উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নাদিম ও তার বন্ধু মনিরুজ্জামান। প্রথম অবস্থায় অনেকেই নিরুৎসাহিত করলেও দেশে সর্ববৃহৎ আনারের বাগান গড়তে পেরে গর্বিত মোহাম্মদ নাদিম।
সম্প্রতি সরেজমিনে বাগান পরিদর্শনে গেলে মোহাম্মদ নাদিম বলেন, আমি এবং আমার পার্টনার মনিরুজ্জামান চৌধুরী এখানে সাড়ে ৩ একর জমির উপর ১১’শ আনার গাছ লাগাই। গত বছর এখানে কিছু ফল এসেছিলো। কিন্তু এবার প্রচুর পরিমাণে ফল এসেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন এবার অন্তত ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার আনার বিক্রি করবেন তারা।
আরও পড়ুনকোন ধরনের রোগবালাই দেখা না দিয়ে একেকটি গাছ কমপক্ষে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। প্রথম বারেই সফল হওয়ায় এই বাগান আরও সম্প্রসারণ করবেন বলে জানান বাগান মালিক। আগামীতে এই ফল উৎপাদন করে নিজেকে আর্থিকভাবে লাভবানের পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা কিছুটা হলেও সাশ্রয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এত বড় আনারের বাগান আর কোথাও নেই।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: আফজাল হোসেন জানান, পরীক্ষামূলকভাবে দিনাজপুরের মাটিতে আনারের বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, দিনাজপুরের মাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই বিদেশি ফল চাষে সবরকম পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়নি। যেগুলো বালাই বা রোগের সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবেলায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবরকম পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই বাগান দেখে অন্যান্য কৃষি উদ্যোক্তারাও আনার চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
মন্তব্য করুন