ভরা মৌসুমেও কাঙ্খিত পরিমাণে মাছ নেই যমুনা ও বাঙালি নদীতে, চড়াদামে বিক্রি

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : বর্ষাকালে সারিয়াকান্দির নদ নদী এবং খালবিলে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া গেলেও এ ভরা মৌসুমেও সারিয়াকান্দির যমুনা এবং বাঙালি নদীসহ বিভিন্ন ধরনের খালবিলে কাঙ্খিত পরিমাণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে পানি না থাকায় মাছের যোগান কমে গেছে, তবে পানি হলে আবারও মাছ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকবছর আগেও বর্ষাকালে নদ নদীগুলোতে বা খালবিলে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া যেতো। বেশিরভাগ গরীব দু:খী মানুষ নদী এবং খালবিল থেকেই মাছ শিকার করে তিনবেলা ভাত মাছ খেতো। মাছ খেয়ে শেষ করতে না পেরে অনেকেই মাছ শুকিয়ে শুটকি করে রাখতো।
সময়ের পরিক্রমায় নদীতে বা খালবিলে পানি থাকলেও সেখানে মিলছে না কাঙ্খিত পরিমাণে মাছ। উপজেলার দেবডাঙা মাছের আড়ৎ এবং কালিতলা মাছের আড়ৎ এ গিয়ে দেখা যায় আড়ৎগুলো প্রায় মাছশূন্য। সেখানে নেই নদী এবং খালবিলের বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ছোট বা বড়মাছ। বর্ষাকালে যেখানে মাছ খুবই কমদামে বিক্রি হতো সেখানে সোনার দামের মতো বিক্রি হচ্ছে নদীর দেশীমাছ।
আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে সেখানে প্রতিকেজি মাছ ৮শ’ থেকে ১৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভরা বর্ষা মৌসুমে নদীতে প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি মাছ পাওয়া গেলেও এখন নদীর চিংড়ি পাওয়া খুবই দুস্পাপ্য। যেটুকু পাওয়া যায় তা খুবই চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে এখানে প্রতিকেজি চিংড়ি মাছ ৮শ’ টাকা থেকে শুরু করে ২৮শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ মৌসুমে নদী বা খালবিলে দেশী পুঁটিমাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। কিন্তু এ বছর উপজেলার মাছ বাজারগুলোতে দেশী পুঁটিমাছও পাওয়া যাচ্ছে না। নদীর দেশী চান্দা, খইলসা এবং দাইড়কা মাছ দিয়ে যেখানে বাজারগুলো পরিপূর্ণ থাকতো সেখানে বাজারগুলো এখন এসব মাছশূন্য হয়ে পরেছে। উপজেলার মাছ বাজারগুলোতে এখন শুধুমাত্র পুকুর বা বিলের মাছই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুনসেটাও খুবই চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে। আজ শনিবার পৌর এলাকার মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পুকুর বা বিলের চাষের কৈ ৩২০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, রুই ২৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি, কাতল ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি, বাটা ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজি, সিলভার ১৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজি, মিয়র কার্প ২০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এসব চড়াদামে মাছ কিনে বাজারকারীরা নানা ধরনের মন্তব্য করে বাজার ত্যাগ করছেন।
পৌর এলাকার আমিনুল ইসলাম হিরু বলেন, বাসায় মেহমান এসেছে তাকে নদীর দেশিমাছ খাওয়াতে চাই, তবে বাজার ঘুরে নদীর কোনও দেশীমাছ পেলাম না। অবশেষে বেশ চড়াদামে বাজার থেকে পুকুরের মাছ কিনলাম। মাছ বিক্রেতা নিতাই চন্দ্র হাওয়ালদার বলেন, আগে আমরা নদীতে একদিন মাছ শিকার করে দুইদিন ধরে বিক্রি করতাম। কখনো মাছ বিক্রি করে শেষ করা যেতো না।
তাই সস্তায় মাছ বিক্রি করতাম। এ বছর নদীতে মাছ একেবারেই নাই। সারাদিন জাল ফেলে যে মাছ পাওয়া যায় তা বাজারে বিক্রি করে কামলার খরচই উঠছে না। তাই আমাদের জেলেরা এখন এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুর্শিদা খাতুন বলেন, এটা বর্ষাকাল হলেও নদী এবং খালবিলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ পানি নেই। পানি না থাকার কারণে মাছের কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে পানি হলে মাছও বৃদ্ধি পাবে। তবে গত কয়েকদিন আগেও যৌথবাহিনীর অভিযানে চায়না দুয়ারি এবং কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের জেল দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন