নরসিংদীর ডিকশনারি থেকে চাঁদাবাজি শব্দটিকে বিদায় করে দেওয়া হবে:অতিরিক্ত এসপি

নরসিংদীতে প্রকাশ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদা তোলা অবস্থায় দুইজনকে হাতে নাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে এ দুজনকে দ্রুত বিচার আইনের মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এসময় পুরো কার্যক্রমেরই নেতৃত্ব দেন নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনোয়ার হোসেন।
এসময় চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার ও অটোরিকশা চালকদের আশ্বস্ত করা অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ার পর মুহূর্তের মধ্যেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ওই ভিডিওতে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সংঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নরসিংদী শহরের একটি ব্যস্ততম রাস্তায় প্রবেশ করে। সেখানে তিনি দেখতে পান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার থেকে জোরপূর্বক টাকা নেওয়া হচ্ছে। সে সময় হাতে নাতে দু’জনকে আটক করা হয়। পরে স্থানীয় অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেসময় অটোরিকশা চালকেরা তার কাছে চাঁদাবাজদের নির্যাতেন ঘটনা বর্ণনা করলে আটককৃত দুইজনকে দ্রুত বিচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনার পর পরই নিজের ফেইসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন তিনি। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় চান্দা-ভাইয়েরা, নরসিংদীতে আমরা আপনাদের দুই সহযোগী প্রকাশ্য চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করায় জানি আপনাদের আঁতে ঘা লেগে গেছে। আমাকে থামাতে নানামুখী আয়োজনও চলছে আপনাদের। লোভ-লালসা থেকে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন, বাদ যাচ্ছে না কোনোটাই। হয়তো ভাবছেন, পুলিশ অফিসারেরা অমন আওয়াজ টুকটাক দেয়ই। বাণ্ডিলের প্রত্যাশা জানান দেওয়া আরকি! হয়তো মোটা কলেবরের 'কিছু' পকেটে পুরে দিলেই টুপ করে চুপ মেরে যাবে। যারা এ ধারণার বশবর্তী হয়ে পয়সার লোভ দেখিয়ে আমাকে থামাতে চান, তারা দয়া করে আমার চাকুরি জীবনের ইতিহাসে একটু নজর বুলিয়ে নেবেন। নরসিংদীতেও আমার গত ৮/৯ মাসের কর্মকালে ওসি, এসআই থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এক কাপ চা-ও খাওয়াতে পেরেছে কিনা! আই লিটারেলি মিন- 'এক কাপ চা'। প্রমাণ লাগবে না, কেউ মুখে মুখে হলেও বলুক! শুধু এটুকুই বলব- টাকা দিয়ে আমাকে কিনতে পারে, বাংলাদেশে কোনো মায়ের গর্ভে এমন সন্তানের জন্ম অদ্যাবধি হয়নি। প্লিজ কাম টু নো। পুরো চাকরি জীবনে একটি অবৈধ পয়সা গ্রহণ করেছি প্রমাণ দিতে পারলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে কামলা দিয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করব।
আর যারা প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টায় রত আছেন- ভবিষ্যতে আমাকে দেখে নিবেন ইত্যাদি ইত্যাদি, তাদেরকে বলব, আমাকে আপনারা চিনেননি। আমি চাকরির মায়া করে কাজ করি না ভাই। ভবিষ্যত তো দূরঅস্ত, এমনকি আগামীকালও যদি আমাকে পুলিশ থেকে চলে যেতে হয়, এ নিয়ে কখনো আমার সামান্যতম অনুশোচনাও থাকবে না। রিজিকের মালিক রাজ্জাক। আর জেনে নিন, জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে- এ বিশ্বাস হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত না থাকলে চুনোপুঁটিতূল্য নগন্য এক অফিসার হয়ে আপনাদের মতো মহাপরাক্রমশালীদের সাথে পাঙ্গা নিতে আসতে পারতাম না।
আরেকটা কথা, আমার নাম করে কেউ টাকা চাইলে বা আপনারা কাউকে টাকা দিলে নিশ্চিত থাকবেন সেই টাকা প্রতারকের পকেটে গেল। ভবিষ্যতে আবার বলবেন না যে, আপনার জন্য না ওমুককে দিয়ে বাণ্ডিল পাঠালাম। আবারও সতর্ক করছি, সংশোধন হয়ে যান। অন্যথায় আমি অতি নগন্য একজন অফিসার হয়ে আপনাদের মতো ক্ষমতাশালীদের প্রতিপক্ষ হতে বাধ্য হব। মনে রাখবেন, এবারেরটা ছিল শুধু প্রাথমিক বার্তা মাত্র। পরের ধাপ আরও কঠোর হবে। আশা করি, আপনারা সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাইবেন না।
আরও পড়ুনইনশাআল্লাহ নরসিংদীর থেকে চাঁদাবাজি শব্দটিকে বিদায় করে দেওয়া হবে, হবে, হবে। অতীতে যা ছিল শুধু আপনার ভাবনায়, সেসবের বাস্তব রূপদান শুরু হবে প্রাণের নরসিংদী থেকেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন বার্তা দেওয়ার পর কথা হয় নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, যখন আপনি কোনো ভালো কাজ করবেন, তখন আপনার ওপর চাপ আসবেই। চাপ নিয়েই কাজ করতে হয়। তবে আমরা কোনো চাপকেই আমলে নিচ্ছি না। যত চাপ থাকুক, চাঁদাবাজ চক্র যত প্রভাবশালীই হোক,যতোই চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করুক আমরা সেগুলো আমলে না নিয়ে নরসিংদীবাসীর স্বার্থে সাধারণ মানুষ যেন চাঁদাবাজি মুক্ত পরিবেশে বসবাস করতে পারে সেটা আমরা নিশ্চিত করব।
তিনি আরও বলেন, এই দুইজন চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তারের পর একটা চক্র সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে এবং পুলিশদের নানা কথা বার্তা প্রচার করছে। যে আমি তাদের ওপর অত্যাচার করছি, তারা বৈধ্য, আমার উচিত পৌরসভার সঙ্গে কথা বলা, আমি হিরো হওয়ার চেষ্টা করছি আরও কতো কি। আসলে আমি শুধু আমার জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আমি কোনো হিরো হতে আসিনি। আমার দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা, চাঁদাবাজ মুক্ত রাখা। আমি সেগুলোই করছি। আমাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য নানা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে প্রভাবশালী মহল। তবে আমি এসব চিন্তা করে কোনো কাজ করি না।
আনোয়ার আরও বলেন, আমি একটা দায়িত্বশীল পদে থেকে না জেনে, না বুঝে কিন্তু কিছু করতে পারি না। সেজন্য আমি আমাদের পুলিশ সুপার মহোদয়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সব তথ্য নিয়েই কাজ করি। তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ইজারা দেওয়া হয়েছে কথাটি সত্য। তবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অটোরিকশা, সিএনজি ও বিভিন্ন যানবাহন দাঁড় করিয়ে টাকা নেওয়ার কথা ইজারা পত্রে উল্লেখ করা আছে? দেখাতে পারবে কেউ! তাদের নির্দিষ্ট একটা স্ট্যার্ন্ডে যখন কোনো যানবাহন রাখবে তার ভাড়া হিসেবে টাকা নিতে পারবে। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে মারধর করে, গালিগালাজ করে টাকা নেওয়াটা কোনোভাবেই ইজারার মধ্যে পড়ে না। এটা চাঁদাবাজি। নরসিংদীর ডিকশনারি থেকে চাঁদাবাজি শব্দটিকে বিদায় করে দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন