ভিডিও শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

বিশ্বমানচিত্রে নাম নেই এমন দেশের দূতাবাস, ভারতে গ্রেপ্তার ভুয়া ‘দূত’

ছবি : সংগৃহীত,বিশ্বমানচিত্রে নাম নেই এমন দেশের দূতাবাস, ভারতে গ্রেপ্তার ভুয়া ‘দূত’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে ভাড়া বাড়িতে ‘ভুয়া দূতাবাস’ চালানোর অভিযোগে ৪৭ বছর বয়সী হর্ষ বর্ধন জৈনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ, তিনি গাজিয়াবাদের কবিনগর এলাকার একটি বাড়ি থেকে ‘ওয়েস্টার্কটিকা’র নামে একটি অবৈধ কূটনৈতিক মিশন চালাচ্ছিলেন।

ওয়েস্টার্কটিকা, সাবোরগা, পলভিয়া এবং লোডোনিয়ার মতো তথাকথিত ‘দেশের’ কনসাল বা রাষ্ট্রদূত বলে পরিচয় দিয়ে মানুষকে প্রতারণায় ফেলতেন বলে এসটিএফ জানিয়েছে। মূলত দেশ হিসেবে এগুলোর স্বীকৃতি নেই।


এসটিএফের নয়ডা ইউনিটের এসএসপি সুশীল ঘুলে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি ওয়েস্টার্কটিকা, সাবোরগা, পলভিয়া, লোডোনিয়া এবং আরো কয়েকটা তথাকথিত দেশের দূত সেজে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।’

উত্তর প্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আইন-শৃঙ্খলা) অমিতাভ যশ জানান, হর্ষ বর্ধন নিজেকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র দেশের ‘রাষ্ট্রদূত’ বলে দাবি করতেন এবং তার বাড়িতে সেই দেশের পতাকা ও কূটনৈতিক নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন। তিনি বিলাসবহুল গাড়িতে কূটনৈতিক রেজিস্ট্রেশন নম্বরপ্লেট ব্যবহার করতেন। অফিস সাজিয়ে তুলেছিলেন একটি আসল দূতাবাসের আদলে।


পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ৪৪.৭ লাখ রুপি, প্রায় ৩০ লাখ রুপির বিদেশি মুদ্রা, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি (অডি ও মার্সিডিজ), ২০টি ভুয়া কূটনৈতিক রেজিস্ট্রেশন প্লেট, ১২টি জাল পাসপোর্ট, ২টি প্যান কার্ড, বিভিন্ন দেশের ৩৪টি স্ট্যাম্প, ১২টি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের ঘড়ি, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি।

কিছুদিন ধরেই কবিনগর এলাকায় ‘ভুয়া দূতাবাস’ চালানোর অভিযোগ পাচ্ছিল পুলিশ। কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফ থেকেও বিষয়টি নিয়ে তথ্য দেওয়া হয়।


এর পরই ইউপি এসটিএফ তদন্তে নামে।
তদন্তে উঠে আসে, হর্ষ বর্ধনের ‘দূতাবাসে’ বিভিন্ন ছোট দেশের পতাকা ও নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস অর্জন করতেন তিনি। তার ভুয়া পরিচয় আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে তিনি কূটনৈতিক নম্বরপ্লেটসহ গাড়ি ব্যবহার করতেন এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক বৈঠকের ছবি প্রচার করতেন।

আরও পড়ুন

পুলিশ জানিয়েছে, হর্ষ বর্ধন জৈনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন তিনি। এ ছাড়া ভুয়া শেল কম্পানির মাধ্যমে হাওয়ালা (অর্থ স্থানান্তরের একটি পদ্ধতি) চক্র চালাত বলেও জানা গেছে।


২০১৬ সাল থেকে তিনি এই কার্যকলাপ চালাচ্ছেন। শুরুতে বাবার বাড়ি কেবি-৪৫ থেকে কাজ করতেন, পরে পাঁচ মাস আগে পরিবারসহ ১.৮ লাখ রুপির কেবি-৩৫ নম্বর বাড়িতে ভাড়া নেন। 
হর্ষ বর্ধন জৈনর এমন কাণ্ড ওই এলাকার বাসিন্দারা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। কারণ বাড়ির সামনে গাড়ির বহর লেগে থাকত। প্রতিবেশীদের ধারণা ছিল, জৈন বাস্তবে একজন কূটনীতিক। 

ওই এলাকার এক তরুণী বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘আমরা ভাবতাম কোনো কূটনীতিক হয়তো এখানে থাকেন। লোকজন খুব বেশি বাড়িতে থাকতে দেখিনি। বাড়ির সামনে অনেক গাড়ি দেখা যেত। বিভিন্ন  ক্ষুদ্র দেশের পতাকাও থাকত। কেউ খেয়ালই করিনি যে এখানে একটা ভুয়া দূতাবাস চালানো হচ্ছে। আমরা ভাবতাম প্রভাবশালী কোনো কূটনীতিক হয়ত এই পাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন।’

পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও হর্ষ বর্ধনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ২০১১ সালে তাকে একটি অবৈধ স্যাটেলাইট ফোনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

পুলিশ আরো জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশের ভেতরে কূটনৈতিক মিশন বা দূতাবাস চালাতে পারে না। এটি ভারতের সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন। বর্তমানে হর্ষ বর্ধনকে আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কি না, কিংবা এর পেছনে কোনো আন্তর্জাতিক চক্র আছে কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা, আজকাল ডটইন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে বাড়িতে কচ্ছপ রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা

বগুড়ার শেরপুরে ইয়াবাসহ কারবারি গ্রেফতার

বিমান বিধ্বস্তে দগ্ধ পাঁচজনের অবস্থা সংকটাপন্ন

বগুড়ার কাহালুতে ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

বগুড়ার ধুনটে জমি দখলের প্রতিবাদ করায় কৃষককে হত্যার চেষ্টা

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের ব্যবয়ায়ীর ১১ টন চাল পটুয়াখালী থেকে উদ্ধার গ্রেফতার ২