আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ তীব্র গরমে পুড়ছে ইউরোপের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, গ্রিসসহ বহু দেশে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রার তাপ সতর্কতা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ফ্রান্সজুড়ে বড় আকারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুন) ফ্রান্সের ১৬টি অঞ্চলে সর্বোচ্চ রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্যারিসও রয়েছে। এছাড়া আরও ৬৮টি অঞ্চলে জারি করা হয়েছে কম ঝুঁকির অরেঞ্জ অ্যালার্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার প্যারিসের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে ফ্রান্সের রেড অ্যালার্ট কার্যকর হয়েছে।
এর আগে, সোমবার ফ্রান্সের ৯৬টির মধ্যে ৮৪টি অঞ্চলে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি ছিল। দেশটির জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী এ অবস্থাকে নজিরবিহীন পরিস্থিতি বলেছেন।
রবিবার তীব্র তাপপ্রবাহে দক্ষিণ কর্বিয়েরেস পর্বতমালায় বেশ কয়েকটি বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটনাও ঘটেছে। ওইসব এলাকার লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে একটি মোটরওয়ে। সেখানকার কর্মকর্তারা ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ায় ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ২০০টি স্কুলের মধ্যে কোনোটি বন্ধ আর কোনোটি আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহের মাঝামাঝি তাপদাহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে পূর্বাভাসে।
এদিকে, ইতালির ২১টি শহরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রোম, মিলান, ভেনিস ও সার্ডিনিয়া দ্বীপ। ইতালির জরুরি চিকিৎসা সেবা বিভাগের সহসভাপতি মারিও গুয়ারিনো সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তাপপ্রবাহজনিত অসুস্থতা ও হিটস্ট্রোকের ঘটনা ১০% বেড়েছে।
স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ক্রোয়েশিয়াসহ বলকান অঞ্চলের দেশগুলোর কিছু অংশেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর বাইরে তুরস্কে দাবানল দেখা দিয়েছে। অনেক দেশেই জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং জনসাধারণকে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকার থাকতে বলা হয়েছে।
সোমবার যুক্তরাজ্যের কিছু অংশে জুন মাসের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতমের কাছাকাছি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ওইদিন যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে ৩৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উইম্বলডনে তাপমাত্রা ছিল ৩২.৯ ডিগ্রি, যা ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন।
সেভিলের বাসিন্দা ২১ বছর বয়সী আনাবেল সানচেজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমি ঘুমাতে পারছি না। অনিদ্রায় ভুগছি। খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে প্রায়। কোনো কাজে মন দিতে পারছি না।”
আরও পড়ুনএকই রকম পরিস্থিতি পর্তুগালেও। রাজধানী লিসবনসহ সাতটি জেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে।
জার্মানির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার ও বুধবার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এটি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে জার্মানির রাইন নদীর পানি কমে গেছে। পানি কমে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটে পণ্যবাহী জাহাজে মালামাল পরিবহন কঠিন হয়ে পড়েছে। জাহাজগুলোকে কম পণ্য নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে।
বলকান অঞ্চলের দেশগুলোও তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে। যদিও কিছু কিছু এলাকার তাপমাত্রা একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে।
ইউরোপের পাশেই তুরস্কে উদ্ধারকারী দল অন্তত ৫০,০০০ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। দেশটির পশ্চিমে অবস্থিত ইজমির থেকে তাদের সরানো হয়েছে। দমকল কর্মীরা এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। ঘণ্টায় ১২০ কিমি বেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে।
ক্রোয়েশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। সেখানকার উপকূলীয় এলাকায় রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। পাশের দেশ মন্টিনেগ্রোতেও তীব্র তাপমাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গ্রিসে কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছেছে। রাজধানী এথেন্সের আশেপাশের উপকূলীয় এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকে নিরাপদ স্থানে যেতে বাধ্য হয়েছেন।