ঠাকুরগাঁওয়ে হারিয়ে যাওয়া বাঁশ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় কয়েকটি পরিবার

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ায় হারিয়ে যাওয়া বাঁশশিল্পকে আঁকড়ে ধরে এখনও জীবন ধারণ করছে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। বাঁশ থেকে তৈরি ডালা, কুলা, চালনা, খৈইচালা, জালি, ঝাপনি, চাঙ্গারি, হাত পাখা, বাচ্চাদের ছোট কুলাসহ হরেক রকমের পণ্য বিক্রি করে নিজেদের যেমন বাঁচিয়ে রেখেছেন, ঠিক তেমনি দেশীয় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে পরিবারগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, রুহিয়া রামনাথ হাট প্রগতি ক্লাবের সামনে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রি করছেন বিকাশ নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, অতীতে গ্রামগঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্যসামগ্রীর কদর ছিল। বাঁশের তৈরি তৈজসপত্রই ছিল সংসারের মূল ভরসা। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন প্লাস্টিক পণ্যের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প।
তবে পূর্বপুরুষের ব্যবসাকে এখনও ধরে রেখেছেন ২০নং রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন মন্ডলাদাম গ্রামের মানিক রায়, সেনিহাড়ি গ্রামের দুলাল দাস, সরেন দাস, নান্দু দাস, নব দাস হালদারসহ আরও অনেকেই। বাঁশ শিল্পের কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের পুরুষরা বিভিন্ন বাগান থেকে ভালো ও লম্বা মানের বাঁশ সংগ্রহ করেন।
পরে সেই বাঁশ প্রথমে ছেঁচে পণ্যের আকার অনুযায়ী কেটে নেয়। কেটে নেওয়া অংশ থেকে বাঁশের পাতলা ও চিকন চাঁচ তৈরি করে তা দিয়ে ডালা, কুলা, চালনাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। একজন কারিগর দিনে ৭-৯টি কুলা তৈরি করতে পারেন। পাইকারদের কাছে এই কুলা বিক্রি করেন ১৫০-১৬০ টাকা করে। আর খোলা বাজারে এটি বিক্রি হয় ১৭০-১৮০ টাকা।
আরও পড়ুনবাঁশ শিল্পের ব্যবসায়ী লক্ষণ রায় জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা করছেন। প্রতি হাটে ২-৪ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। এছাড়া গ্রামের হাট-বাজারে বাঁশের তৈরি এসব পণ্য বিক্রি করেন। তাতে ভালো আয় হয়।
আরেক ব্যবসায়ী অতুল রায় বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবসা করছেন তিনি।
এখানে প্রতি পিস ডালা খুচরা বিক্রি হয় ১০০ টাকা, কুলা ১৫০ টাকা, চালনা ১০০ টাকা, ডালি ১৩০ টাকা, ঢাকি ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা হাত পাখা ৪০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতিদিন গ্রাম-গঞ্জে নিয়ে ফেরি করলে, সৌখিন মানুষরা এসব পণ্য কিনেন। দিনশেষে যা বিক্রি হয় তা নিয়েই বাড়ি ফেরেন। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্য বেশি হওয়ায়, স্বল্প আয়ের এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন কেবল নারীরাই ধরে রেখেছেন পারিবারিক এ ঐতিহ্য।
মন্তব্য করুন