আগামী বছর বগুড়া বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচল শুরু হবে
গনেশ দাস : আগামী বছর বগুড়া বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচল শুরু হবে। এজন্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়েসহ অন্যান্য উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ। বিমান চলাচল শুরু হলে শিল্পনগরী খ্যাত বগুড়া সাজবে নতুন সাজে। সেই সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করছেন বগুড়াবাসী।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার আমলে বগুড়াকে মডেল জেলায় পরিণত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সেই অনুয়ায়ী বগুড়া- নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের পার্শ্বে বগুড়া সদর উপজেলার পশ্চিমে এরুলিয়ায় বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। সেই সময় ১০৯ দশমিক ৮১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য।
প্রকল্পের আওতায় পাঁচ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০০ ফুট প্রস্থ রানওয়ে নির্মাণ ছাড়াও অফিস ভবন, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় এবং ২০০০ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে আবারো বিমানবন্দর চালু করার কাজ শুরু করা হয়।
২০০৫ সালের ১২ মার্চ বিমানবন্দরটি বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সেখানে ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টরস স্কুল গড়ে তোলা হলেও বিমানবন্দরে কোন নির্ধারিত যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল করে না। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কবলে পড়তে হয় বগুড়া বিমানবন্দরটিকে। এতে করে মুখ থুবড়ে পড়ে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন।
গত বছর জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হলে বিমানবন্দরটিকে বাণিজ্যিকভাবে চালুর উদ্যোগ নেয়ার জন্য বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা গত বছরের ৩ নভেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এর সচিব বরাবর চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বগুড়া জেলা উত্তরবঙ্গের বাণিজ্যিক রাজধানী।
বগুড়া প্রাচীন পুন্ড্র সভ্যতার রাজধানী ছিল। একারণে এজেলা প্রত্নতাত্বিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও বগুড়াসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক স্পট রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম, ফাইভ স্টার হোটেল, মোটেল থাকায় বিমানবন্দর চালু হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটক বৃদ্ধি পাবে।
চিঠিতে জেলা প্রশাসক আরো উল্লেখ করেন, বাণিজ্যিক বিমান সেবা চালুর জন্য ৯০ এর দশকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন বিমানবন্দরটিতে শুধুমাত্র বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। জেলা প্রশাসকের চিঠির পরপরই বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। সেসময় বিমানবাহিনী প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন। এরপর পরই বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
আরও পড়ুন
এদিকে বগুড়া বিমানবন্দর চালু হলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে উল্লেখ করে বগুড়া বিসিকের উপ- মহাব্যবস্থাপক মাহফুজার রহমান বলেন, ভৌগোলিকগত দিক থেকে বগুড়া বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে পরিচিত। বগুড়ায় উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রাংশ দেশের ৭০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে। বিমানবন্দর চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ফলে দেশি- বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে কর্মসংস্থান বাড়বে।
পরিবহন ব্যবসায় কিছুটা মন্দা হবে উল্লেখ করে বগুড়া বাস-মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক এরশাদুল বারী এরশাদ বলেন, বিমানবন্দর চালু হলে সময় সাশ্রয়ের জন্য অসংখ্য মানুষ বিমানে ঢাকায় যাতায়াত করবে। যার কারণে পরিবহন ব্যবসায় কিছুটা মন্দা দেখা দিতে পারে। তারপরেও বগুড়ার উন্নয়ন এবং ব্যবসা বাণিজ্যে সুবিধার জন্য বিমানবন্দর চালু হওয়া জরুরি।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম সেটা অনুমোদন হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কাজ বাস্তবায়ন করছে। বিমানবন্দর বাণিজ্যিক ভাবে চালু করার প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরেই ছোট এয়ারক্রাফটগুলো ল্যান্ড করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, কাজ চলমান রয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে ৪ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ের সংস্কার কাজ শেষ হবে। বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচলের জন্য ৬ হাজার ফুট রানওয়ে দরকার হয়।
বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু করতে আরো ১৩০০ ফুট রানওয়ে প্রয়োজন। আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অনুমোদন হলে দ্বিতীয় ধাপে কাজ শুরু হবে। আগামী বছর বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচল শুরু করা যাবে।
মন্তব্য করুন