ভিডিও সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা

ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্কঃ গরমকালের সবজির তালিকায় আছে ঢেঁড়স। সুস্বাদু আর পুষ্টিকর এই সবজি থাকে অনেকেরই খাদ্যতালিকায়। ভাজি, ভর্তা কিংবা তরকারি সবভাবেই ঢেঁড়স খাওয়া হয়। অনেক জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এই সবজি। কিন্তু তাই বলে কি ঢেঁড়স রোজ খাওয়া যায়? এটি কি অ্যালার্জির কারণ হতে পারে? উত্তর জানুন এই প্রতিবেদনে- 
 

ঢেঁড়স এর পুষ্টিগুণ: 
ঢেঁড়স একটি পুষ্টিকর সবজি। এক কাপ বা ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণের একটি বিশদ তালিকা তৈরি করেছে আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার। এই তালিকা অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে রয়েছে-

 

 

৩৩ ক্যালোরি
১.৯ গ্রাম প্রোটিন
০.২ গ্রাম ফ্যাট
৭.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
৩.২ গ্রাম ফাইবার
১.৫ গ্রাম চিনি
৩১.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে
২৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
০.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ বা থিয়ামিন
০.২১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬
৬০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি৯ বা ফোলেট
৩৬ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ
২৯৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
৮২ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম
৫৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম
৭ মিলিগ্রাম সোডিয়াম

এ ছাড়াও ঢেঁড়সে অল্প পরিমাণ আয়রন, ফসফরাস, কপার এবং ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন রয়েছে। আরও আছে ক্যাটেসিন, কোয়ারসেটিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস।
 

ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা:
ঢেঁড়সে রয়েছে মিউসিলেজ নামে থকথকে জেলির মতো পদার্থ যা শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ শরীরকে নানা রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকে। এই সবজি খেলে কী কী উপকার মেলে চলুন জেনে নিই-

 

১. ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে ঢেঁড়স 
ঢেঁড়সে রয়েছে লেকটিন নামে এক ধরনের প্রোটিন। ২০১৪ সালে এই প্রোটিনকে কাজে লাগিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা করেন ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি ফেডারেল দে পেলাটার গবেষকরা। দেখা যায়, ওই পদ্ধতিতে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ৬৩ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি ৭২ শতাংশ ক্যানসারের কোষ নষ্টও হয়েছে। ২০১৬ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, ঢেঁড়সে থাকা ফোলেট স্তন ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

২. ঢেঁড়স খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে
২০১১ সালে এক দল গবেষক ঢেঁড়সের পাউডার বানিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস আক্রান্ত কিছু ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করেন। প্রায় এক মাস ধরে প্রতিদিন ইঁদুরগুলোর একাংশকে সেই পাউডার খাওয়ানো হয়। এক মাস পরে দেখা যায় যেসব ইঁদুরকে ঢেঁড়সের পাউডার খাওয়ানো হয়েছিল, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটাই কমেছে। বাকিদের কমেনি। যদিও একই ফল মানবদেহেও দেখা যাবে কি না, তা এখন গবেষণাসাপেক্ষ।

২০১৯ সালের একটি পর্যালোচনায় ঢেঁড়সকে অ্যান্টি ডায়াবেটিক অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোধক বলেই ব্যাখ্যা করেছে ইতালির রিসার্চ সেন্টার ফর ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা রোজকার পাতে এই সবজি রাখতে পারেন।

৩. হার্টের জন্য উপকারি ঢেঁড়স 
যেকোনো খাবার যাতে ফাইবার বেশি তা হার্টের জন্য উপকারি। এমনটাই মনে করেন আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশন। কারণ রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ফাইবার। ফলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। পাশাপাশি এটি স্ট্রোক ও স্থূলত্বের মতো সমস্যাও দূরে রাখতে সাহায্য করে।

৪. অস্টিওপোরোসিস ঠেকাতে সাহায্য করে ঢেঁড়স 
হাড়ের কাঠামো ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন কে। ঢেঁড়স এই ভিটামিনের ভালো উৎস। যা অস্টিওপোরোসিসের মতো হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার অসুখকে ঠেকাতে পারে। হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ঢেঁড়স।
 

রোজ কি ঢেঁড়স খাওয়া ভালো
ঢেঁড়স উপকারী হলেও এটি রোজ খাওয়া উচিত নয়। এই সবজি বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে-

 

আরও পড়ুন

১. পেটের সমস্যা: ঢেঁড়সে আছে ফ্রুকটেন নামে এক ধরনের কার্বোবাইড্রেট। এটি বেশি পরিমাণ শরীরে গেলে ডায়েরিয়া, গ্যাসের সমস্যা, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে।

২. রক্ত জমাট বাঁধা: ঢেঁড়সে আছে ভিটামিন কে যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাই হার্টের রোগী বা যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তারা রোজ ঢেঁড়স খেলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে খাওয়াই ভালো। নয়তো ওষুধ কাজ না-ও করতে পারে।

৩. কিডনিতে স্টোন: ঢেঁড়সে অক্সেলেটের পরিমাণ বেশি। তাই এই সবজি বেশি পরিমাণে খেলে কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। কেননা অধিকাংশ কিডনি স্টোন তৈরিই হয় ক্যালসিয়াম অক্সেলেট থেকে। তবে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন। তাতে সমস্যা নেই।

 

ঢেঁড়স খেলে কি এলার্জি হয়? 
হ্যাঁ, কিছু মানুষের ঢেঁড়স খেলে অ্যালার্জি হতে পারে। এমনিতে এই সবজির সঙ্গে অ্যালার্জির সম্পর্ক নেই। তবে কিছু মানুষের সমস্যা হতে পারে।

ঢেঁড়স খেলে অ্যালার্জি হতে পারে এমন কিছু কারণ:

১. প্রোটিওলাইটিক এনজাইম: ঢেঁড়সে থাকা প্রোটিওলাইটিক এনজাইম কিছু মানুষের ত্বকে বা অন্যান্য অংশে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

 

২. অতিরিক্ত ঢেঁড়স গ্রহণ: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঢেঁড়স পেটের সমস্যা বা অন্যান্য অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে।

৩. খাদ্য এলার্জি: ঢেঁড়স একটি সবজি। কিছু মানুষের নির্দিষ্ট সবজি বা খাদ্য উপাদানে অ্যালার্জি হতে পারে। যা ঢেঁড়স খাওয়ার সময় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ: ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি, পেট খারাপ বা বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট বা হাঁচি।

 


ঢেঁড়স খাওয়ার পর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া অনুভব করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন, খাদ্যতালিকা থেকে ঢেঁড়স বাদ দিন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার নন্দীগ্রামে পুলিশের অভিযানে নাশকতা মামলায় আটক ৪

প্রতি জেলায় একটি করে নদী দখল-দূষণমুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে - সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান

নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করছে: এনসিপি

মৌসুমের সর্বোচ্চ প্রায় ৭৪ মি.মি বৃষ্টিপাতে ডুবলো বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তা

নিবন্ধন না থাকলে আ’লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই - ইসি মাছউদ

বেনাপোলে ট্রাক্টরের চাপায় শিশু নিহত