ভিডিও মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

এটি অযৌক্তিক, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করাকে নিন্দনীয় বলছেন কর্তৃপক্ষ

বগুড়া বিয়াম স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন

বগুড়া বিয়াম স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের গার্ড মাসুদ রানার বদলিকে কেন্দ্র করে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) থেকে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের জন্য আন্দোলনে নেমেছে।

এর অংশ হিসেবে আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৭টার মধ্যে সকল শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে এলেও ক্লাস বর্জন করেন। ফলে শিক্ষার্থীরা এসে ফিরে যান। এই নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অপরদিকে কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিনের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় ‘উচ্চ মাধ্যমিক মডেল বিদ্যালয়’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ঢাকাসহ ৬টি বিভাগে মোট ১১টি মডেল বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ভৌগোলিক গুরুত্ব বিবেচনায় এর একটি প্রতিষ্ঠান বগুড়াতে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়।

২০০৫ সালের ২৬জুন ‘বগুড়া মডেল স্কুলে’র ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। ২০০৬ সালে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) কর্মকর্তাদের নিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্পের অধিনে নয়টি প্রতিষ্ঠান রেখে ঢাকা ও বগুড়া মডেল স্কুল ও কলেজের পরিচালনার দায়িত্ব বিয়াম ফাউন্ডেশনের উপর ন্যস্ত করা হয়। ২০০৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় বিয়াম ফাউন্ডেশন এবং এর নাম পরিবর্তন করে “বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ’ করা হয়। এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে সম্পূর্ণ প্রাইভেট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণের জন্য তৎকালীন সরকার একটি চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা করা না হলেও ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্পের অধীন ১১টির মধ্যে ৯টি মডেল বিদ্যালয়কে রাজস্ব খাতে রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ না করায় শিক্ষকরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এছাড়া ফাউন্ডেশন শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্ত অন্যান্য সুবিধাও তাদের দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন।

আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে আসা একাধিক অভিভাবক জানান, সংসারের কাজ ফেলে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে এসে শুনি ক্লাস হবে না। শিক্ষকরা সবাই স্কুলে থাকলেও তারা ক্লাস নেবেন না। প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য তারা আন্দোলন করছেন। তারা তাদের দাবি-দাওয়া বা আন্দোলন চালাক, কিন্তু ক্লাস বন্ধ করে কেন? এতে তো আমাদের সন্তানদের ক্ষতি হচ্ছে। স্কুল সরকারি হলে হয়তো আমাদের বেতন কম দিতে হবে, তবে লেখাপড়ার মান কী ঠিক থাকবে বলে তাদের কেউ কেউ প্রশ্ন ছোঁড়েন।

আরও পড়ুন

বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙের কারণে একজন গার্ডের বদলিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনরত শিক্ষকরা প্রথমে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন, পরবর্তীতে তারা ওই বিষয় থেকে সরে এসে প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য আন্দোলনে করছেন।

বিয়াম ফাউন্ডেশনের অধীন ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুরুর কয়েক মাস পরই ৯টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক নিয়োগও মন্ত্রণালয় করে থাকে। শুধু বগুড়া আর ঢাকার স্কুল দুটি বিয়াম ফাউন্ডেশন পরিচালনা করে। এই দুটি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগও ফাউন্ডেশন করে থাকে। তিনি বলেন, আমিও ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছি। চাকরির নিয়োগবিধি নীতিমালায় যে যে সুযোগ-সুবিধার কথা আছে সকলে সেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

ফাউন্ডেশনের নীতিমালায় যদি সরকারিকরণের সুযোগ থাকে তবে সেটি হবে, তাই বলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটিয়ে ক্লাস বর্জন কেন করতে হবে? এই ব্যাপারে বগুড়া জেলা প্রশাসক এবং ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হোসনা আফরোজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এই ধরনের আন্দোলন খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা শুধু নিজেরাই ক্লাস বর্জন করেননি পাশাপাশি তারা কিছু শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ভাঙচুর করিয়ে নিয়েছেন, এটি একটি অপরাধমূলক কাজ। ক্যান্টনমেন্ট স্কুলগুলো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে চলছে, এছাড়া পুলিশদের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পুলিশ লাইন্স স্কুলগুলো চলছে, আমর্ড ব্যাটালিয়ন পুলিশদের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এপিবিএন স্কুলগুলো চলছে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের জন্য তো কোন আন্দোলন করেন না শিক্ষকরা।

হোসনা আফরোজা আরও বলেন, প্রজেক্টের অধীনে প্রথমে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধীনে দেয়া হলেও বগুড়া ও ঢাকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে বিয়াম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ফাউন্ডেশনই নিয়োগ দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধার চেয়ে কোন অংশেই কম সুবিধা পান না।

বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা আরও ভালো সুযোগ পান। এই দুটি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের কোন সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ফাউন্ডেশন ব্যবস্থা নেবে। এই ব্যাপারে বিয়াম ফাউন্ডেশন বগুড়ার পরিচালক আলমগীর কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের যুক্তিসঙ্গত দাবি-দাওয়া থাকতে পারে, সে বলে ক্লাস বর্জন কেন করতে হবে? তারা তাদের দাবিগুলো নিয়ে ফাউন্ডেশনের কাছে আবেদন করতে পারেন, যদি তাদের দাবি যৌক্তিক হয় তবে ফাউন্ডেশন সেটি মেনে নিবে বা পূরণের চেষ্টা করবে। তাদের নিয়োগ বিধিমালায় তো সবকিছু রয়েছে, সে অনুযায়ী তারা আবেদন করতে পারেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিভাইসে ট্রান্সফরমার ও খাঁচাবন্দি মিটার, তবুও থামছে না চুরি

নৃত্য ও সুস্থতা : আত্মার আরাধনায় শরীর ও মন

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বখাটের দায়ের কোপে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থী

আমার নূপুরের ধ্বনি, ছড়াক মানবতার বাণী

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিদ্যুৎ শক দিয়ে মাছ ধরার যন্ত্রপাতিসহ চায়না দুয়ারি জাল জব্দ

বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে স্পেন-ফ্রান্স-পর্তুগাল