ভিডিও রবিবার, ০৪ মে ২০২৫

তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চন বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের সৌখিন আসবাবপত্র 

তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চন বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের সৌখিন আসবাবপত্র 

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চন (বোম্বাই) ভিন্ন প্রজাতির বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের সৌখিন আসবাবপত্র। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে শারিয়ালজোত গ্রাম। গ্রামটির দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম তিন দিক ভারত সীমান্তের কাটাতারের বেড়া।

গ্রামটির পশ্চিমে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ইসলামপুর ও চপড়া থানা এবং দক্ষিণে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। শাড়িয়ায়জোত গ্রামটি দেখতে অনেকটা ‘ব’ অক্ষরের একটি দ্বীপের মতো। গ্রামের লোকজন উত্তর দিকের প্রবেশ দ্বার দিয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে পৌঁছে। সীমান্তবর্তী গ্রাম হলেও কাঞ্চন বা বোম্বাই বাঁশ ও মৌসুমি শীতকালীন বিদেশি বাহারি প্রজাতির টিউলিপ ফুলের চাষ হওয়ায় দেশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিতি গ্রামটি। এই গ্রামের উৎপাদন হয় কাঞ্চন বা বোম্বাই বাঁশ নামের একধরণের ভিন্ন প্রজাতির বাঁশ। বাঁশটি প্রায় ২০-২২ ইঞ্চি প্রস্থ এবং ১৫০-২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা সুপারির গাছের চেয়ে কিছুটা মোটা। ভারতের লোকজনের কাছে বোম্বাই বাঁশ নামে পরিচিতি হলেও তেঁতুলিয়া অঞ্চলে কাঞ্চন বাঁশ নামে পরিচিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে শারিয়ালজোত গ্রামের প্রয়াত সরাফত আলী ভারতের চপড়া থানা এলাকা থেকে এ বাঁশের বীজ এনে সর্বপ্রথম তার বাড়িতে রোপণ করেন। তার বাড়ি থেকেই পরবর্তীতে উত্তরাঞ্চলে নতুন প্রজাতির এই বাঁশের আবির্ভাব ঘটে। পর্যায়ক্রমে তেঁতুলিয়া উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই বাঁশের বিস্তৃতি লাভ করে।

বাঁশ চাষিরা জানান, বোম্বাই বাঁশের চারা শেকড় থেকে বের হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণতা আসে এবং যে কোন কাজে ব্যবহার করা যায়। বাজারে প্রতিটি বাঁশ ২৫০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ বাঁশ দিয়ে ঘরের সৌখিন আসবাবপত্রসহ নানা রকমের কাজে ব্যবহার হয়। বিগত কয়েক বছরে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক ও সোসাল মিডিয়ায় শারিয়ালজোত গ্রামে এসে এই বাঁশের খবর প্রকাশ হয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন উক্ত গ্রামে এসে এই বাঁশের প্রতি পিচ চারা ৫০০-৭০০ টাকা মূল্যে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণত চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বাঁশের চারা পাওয়া যাবে। এই বাঁশ এক নজর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ পর্যটকরা শারিয়ালজোত গ্রামে আসেন। প্রতি সপ্তাহে দেশের দূর-দূরান্তের সৌখিন আসবাবপত্র তৈরির কারিগররা কাঞ্চন বাঁশ নিয়ে যান। বর্তমানে তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া, চিমনজোত, মাগুড়া, সাহেবজোত, তিরনইহাট, বাংলাবান্ধাসহ পঞ্চগড়ের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনের বাড়িতে এই বাঁশ চাষাবাদ হচ্ছে।

আরও পড়ুন

দেশে-বিদেশে এই বাঁশের তৈরি ঘরের সৌখিন আসবাবপত্রের কদর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা তেঁতুলিয়ায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে কাঞ্চন বাঁশ দিয়ে তৈরি ঘরের সৌখিন আসবাবপত্রের কোন কারখানা গড়ে না উঠেনি। বাঁশ চাষি ও সৌখিন আসবাবপত্র তৈরি স্থানীয় কারিগরদের মতে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এঅঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে কাঞ্চন বাঁশ শিল্পের প্রসার লাভের পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব আয়সহ গ্রামটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করবে।

এ ব্যাপারে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট’র গবেষণা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান সরকার মুঠোফোনে জানান, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বোম্বাই বা কাঞ্চন জাতের ভিন্ন প্রজাতির একটি বাঁশ চাষাবাদ হয়ে থাকে। এই বাঁশ ঘরের সৌখিন আসবাবপত্র তৈরির কাছে ব্যবহৃত হয়। এখনো এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেনি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাঁশ চাষিদের পরামর্শসহ ঘরের সৌখিন আসবাবপত্র তৈরিতে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণসহ টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকি। যে কারণে বাঁশটি ধ্বংসের মুখে পড়ার শঙ্কা নেই। পর্যায়ক্রমে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রসারিত হবে। তখন মানুষ বাঁশ শিল্পের সুফল পাবে। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পল্টনে সাব্বির টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে

একদিন পেছালো খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা

দিনাজপুরের বিরলে ২২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার

বগুড়ার ধুনটে জমিতে বিষ দিয়ে ফসল নষ্টের অভিযোগ

বগুড়ার শেরপুরে জমে উঠেছে ধান কাটা শ্রমিকের হাট

নেটপ্রো মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, বগুড়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি