ভিডিও শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

আজ থেকে ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ শুরু

আজ থেকে ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ শুরু,ছবি: সংগৃহীত

অগ্নিঝরা মার্চ—বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়।১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে।  ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনের পথ ধরে  ৬৯’র গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহীনে লালন করা তখনো অধরা ‘স্বাধীনতা’র দুর্বার আকাঙ্ক্ষা যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার আন্দোলন-সংগ্রামের ঘটনাবহুল ও বেদনাবিধুর স্মৃতিবিজড়িত একাত্তরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে এসে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।

২৬ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেডিও পাকিস্তানের সব কেন্দ্রে একযোগে প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা প্রচার করা হয়। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায়, দেশ আবার কঠোর সামরিক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে এবং সামরিক আইন কঠোর করে ভেতরে ভেতরে কোনো গভীর প্রস্তুতি চলছে। দুপুরে রেডিওতে যখন জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল, তখন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত পাকিস্তান ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে এক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ধারা বিবরণী চলছিল। তাই মাঠের ক্রিকেট দর্শকরাই রেডিওতে প্রথম ইয়াহিয়ার এ ঘোষণা শুনতে পান।রেডিওতে খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম সংঘটিত প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্ত করে স্টেডিয়ামের  হাজার হাজার ক্রিকেট দর্শক। তারা সমস্বরে চিৎকার করে উঠে ‘জয় বাংলা’ বলে। ধাওয়া করে পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের এবং স্লোগানে উত্তাল হয়ে জঙ্গি মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের খবর শুনে পিআইএ’র বাঙালি কর্মচারীরাও জনসাধারণের সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েন। জগন্নাথ কলেজ ও পার্শ্ববর্তী কায়েদে আযম কলেজের ছাত্ররাও লাঠিসোটা হাতে রাস্তা প্রদক্ষিণ করতে থাকে। আদমজী মিলের শ্রমিকরা চাকা বন্ধ করে শোভাযাত্রা সহকারে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।সেইদিনের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে সংসদীয় দলের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো স্লোগান দেন, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। ছাত্ররা কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানান। বিক্ষোভ-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকাসহ গোটা দেশ।

আরও পড়ুন

এ পরিস্থিতিতে পূর্বাণী হোটেলের বাইরে বিক্ষুব্ধ বাঙালির কঠোর কর্মসূচির দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান চলতে থাকে। পরে ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতালের ডাক এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ১ মার্চ পেরিয়ে ২ মার্চ। একে একে পার হয় ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ২৫টি দিন। ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এই পথ ধরে বাংলার দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে একটি স্বাধীন দেশ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রমত্তা করতোয়া এখন মরা খাল!

আ.লীগ নেত্রীর মেয়েকে জুলাইযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে জখম

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ

বগুড়ার সোনাতলায় নাশকতা মামলায় সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রুম্পা স্বামীসহ গ্রেফতার

চলমান সংঘাতে স্থগিত করা হল পিএসএলের বাকি ৮ ম্যাচ

বগুড়ার নন্দীগ্রামে ওসি তারিকুল ক্লোজড, নয়া ইনচার্জ মোজাহারুল