রমেক হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার রেডিওথেরাপি যন্ত্র নষ্ট, দুর্ভোগে রোগীরা

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : তিন বছর আগে জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের মাজেদা বেগম (৫৫)। রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এসে এ পর্যন্ত ১১ বার কেমোথেরাপি নিয়েছেন। চিকিৎসক তাকে রেডিওথেরাপি দেয়ার পরামর্শ দিলেও রমেকে রেডিওথেরাপি যন্ত্র অচল থাকায় তার রেডিওথেরাপি চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না।
একই দশা রংপুর সদর উপজেলার লাহিড়ীরহাটের আলেমা বেগমের। ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত এ নারীকে নিতে হবে রেডিওথেরাপি। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয় মেটানোর আর্থিক সক্ষমতা নেই পরিবারের। নিরুপায় হয়ে কেমোথেরাপির ওপর ভরসা তার।
বিভাগের ৮ জেলার ক্যান্সার আক্রান্ত হাজারও রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একমাত্র রেডিওথেরাপি যন্ত্রটি ১০বছর থেকে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। রেডিওথেরাপি চিকিৎসা না পেয়ে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে ক্যান্সার ছড়াচ্ছে দ্রুত গতিতে। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বহু ক্যান্সার রোগী রেডিওথেরাপি চিকিৎসা করাতে পারে না। মাঝপথে চিকিৎসা থেমে যাওয়ায় অনেক রোগী মারা যান।
রমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১২ জুন ক্যান্সার চিকিৎসায় রমেকে রেডিওথেরাপি মেশিন বসানো হয়। পরে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে অচল হয়ে পড়ে আছে যন্ত্রটি। ১০ বছর ধরেও যন্ত্রটি চালুর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাগাদা দিয়ে বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠিয়েও কোন কাজ হয়নি। রমেকের ক্যান্সার বিভাগ সূত্র মতে, শুধু ২০২৩ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপী বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ২ হাজার ৮৪৬ জন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী।
আরও পড়ুনরমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান জাহান আফরোজ খানম বলেন, যন্ত্র চালু থাকাকালীন প্রতিদিন দুই শিফটে গড়ে ১শ’ রোগীকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হতো। যন্ত্রটি নষ্ট হওয়ায় এখানে আর রেডিওথেরাপি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি পর্যায়ে রেডিওথেরাপির জন্য গড় ব্যয় ৬ থেকে ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে একই রেডিওথেরাপি বেসরকারি পর্যায়ে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা। এত উচ্চ ব্যয় ক্যান্সারের অধিকাংশ রোগী বহন করতে পারেন না।
ক্যান্সারের প্রকারভেদ ও রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি। সাধারণত অস্ত্রোপচারের পর কেমোথেরাপি দেয়া হয়। এরপর দেয়া হয় রেডিওথেরাপি। একজন রোগীকে কয়টি রেডিওথেরাপি দেয়া হবে তা নির্ভর করে রোগের অবস্থা অনুযায়ী।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, রংপুরে অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে। এ হাসপাতাল চালু হওয়ার আগে ক্যান্সার বিভাগে রেডিওথেরাপি মেশিন দেয়ার পরিকল্পনা নেই। যে মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে তা অনেক আগের মডেলের এখন ওই যন্ত্রের যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন