বাংলাদেশিদের সমাবেশে নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র প্রার্থী মামদানি

নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানির উত্থান এখন নগর রাজনীতির আলোচ্য বিষয়। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মামদানি বলেন, “আগামী ৪ নভেম্বরের নির্বাচন নতুন ইতিহাস গড়বে। তাই বিভ্রান্তি বা অপপ্রচারে কান না দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটযুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে।”
সোমবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের সানাই পার্টি হলে ‘জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন’ (জেবিবিএ) ও ‘বাংলাদেশিজ ফর জোহরান’-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
মামদানি বলেন, “আমরা ১৩ পয়েন্টের ব্যবধানে সাবেক গভর্নর ও প্রয়াত গভর্নরের পুত্র অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে পরাজিত করেছি। তবুও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তিনি আমাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চান। কিন্তু আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করব।”
তিনি আরও বলেন, “নিউ ইয়র্ক সিটিকে সবার বসবাসযোগ্য একটি শহরে পরিণত করাই আমাদের স্বপ্ন। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই নগরে কঠোর পরিশ্রমী অভিবাসীসহ সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।”
নিউ ইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলমান প্রার্থী হিসেবে মামদানি বলেন, “এই শহরকে স্বপ্নের শহরে পরিণত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মুসলমান ও দক্ষিণ এশীয় ভোটারদের দলে দলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘বাংলাদেশিজ ফর জোহরান’-এর সদস্য-সচিব আব্দুস সোবহান স্বাগত বক্তব্য দেন। জেবিবিএর প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালক ইমাম শামসী আলী, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার এবং জেবিবিএর সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান।
আসন্ন নির্বাচনে ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু ক্যুমো (৬৭)। রাজনৈতিক মহলে ধারণা, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে পুনর্নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ভাষায় মামদানি ‘সমাজতান্ত্রিক ডেমোক্র্যাট’। তিনি সতর্ক করেছেন, মামদানি বিজয়ী হলে নিউ ইয়র্ক সিটি ফেডারেল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। অন্যদিকে, এরিক অ্যাডামস নিজের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলায় ট্রাম্পের ক্ষমার আশায় নির্বাচন থেকে সরে গেছেন বলে জানা গেছে।
রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকেও সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। ফলে যে কোন উপায়ে মামদানিকে রুখতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এক ধরনের রাজনৈতিক চাপ দেখা যাচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক সিটিতে রেজিস্টার্ড মুসলিম ভোটারের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ এবং দক্ষিণ এশীয় ভোটার তিন লাখের বেশি। উগান্ডায় মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া মামদানির প্রতি আফ্রিকান-আমেরিকান, হিসপ্যানিক ও তরুণ ভোটারদের সমর্থনও ক্রমে বাড়ছে বলে অভিবাসীদের অভিমত।
এর বিপরীতে অ্যান্ড্রু ক্যুমো সম্প্রতি মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিভিন্ন মসজিদ ও মন্দিরে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং অভিজ্ঞতার ওপর জোর দিচ্ছেন।
জোহরান মামদানি ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর উগান্ডায় জন্ম নেন। তার বাবা মাহমুদ মামদানি ভারতের গুজরাটের মুসলমান এবং মা পাঞ্জাবি হিন্দু চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার। মামদানির বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থায়ী হয় এবং দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে আসেন।
মন্তব্য করুন