লালমনিরহাটে গ্রামীণ জনপদের হস্তশিল্প ও কৃষি-নির্ভর উপকরণগুলো বিলুপ্তির মুখে

বেলাল হোসেন, লালমনিরহাট: কালের পরিক্রমায় আর আধুনিকতার দাপটে লালমনিরহাটে গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প ও কৃষি-নির্ভর উপকরণগুলো এখন বিলুপ্তির মুখে। একসময় প্রতিটি বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অংশ এসব সামগ্রী ছিল স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। বর্তমানে গ্রামীণ জীবনের পরিবর্তিত চিত্রে এগুলো কেবলই স্মৃতির পাতায় ঠাঁই পাচ্ছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষিকাজে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এক সময়ের লাঙল, বলদ ও জোয়াল আজ প্রায় অদৃশ্য। একইভাবে রাতের আঁধার দূর করার ভরসা হারিকেন, কুপি ও কুইন লাইট এখন এলইডি ও সোলার লাইটের যুগে কেবল সংগ্রহশালার প্রদর্শনী সামগ্রী হিসেবেই রয়েছে।
এছাড়া বাঁশ-বেত ও তালের পাতার তৈরি ছাতা, চালুনি, খাঁচা, ডালি, মইয়ের মতো হরেক রকমের হস্তশিল্পের কদর কমিয়েছে প্লাস্টিক ও ধাতব সামগ্রীর সহজলভ্যতা। অন্যদিকে, মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল, ঘড়া ও চুলার জায়গা দখল করেছে অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের আধুনিক সামগ্রী। ফলে গ্রামীণ কারিগর ও শিল্পীরা জীবিকা হারিয়ে একরকম পথে বসেছেন। তাই পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক পরিবার। এতে ঐতিহ্যবাহী এসকল হস্তশিল্প চরম সংকটে পড়েছে।
আরও পড়ুনস্থানীয় প্রবীণদের মতে, এই নিজস্ব পণ্য ও শিল্পগুলো স্থানীয়ভাবে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিকড়ের পরিচায়ক। এর অবলুপ্তি একটি জনগোষ্ঠীর লোকজ ঐতিহ্যকে মুছে দিচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় এই ঐতিহ্য রক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লোকজ সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, গ্রামীণ হেরিটেজ কর্নার ও মিউজিয়াম গড়ে তোলার পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ একটি শক্তিশালী ভিত্তি হতে পারে। সচেতনতা, সংরক্ষণ এবং সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমেই এটি রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করছেন অনেকেই।
মন্তব্য করুন