জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ভিজিডি’র তালিকায় প্যানেল চেয়ারম্যানের স্ত্রী-আত্মীয়রা

কালাই ও ক্ষেতলাল প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে দু:স্থ অসহায় মানুষের পরিবর্তে প্যানেল চেয়ারম্যানের স্ত্রী, ভাগনী ও স্বজনদের নাম ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট ভিডব্লিউবি (ভিজিডি) কর্মসূচির তালিকাভূক্ত করার অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া তালিকায় স্থান পাওয়া ৪৬ জন সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগও ওঠেছে।
শুধু তাই নয়, শফিকুল ইসলাম চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর বড়তারা ইউনিয়নের প্রতিটি সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ১’শ টাকা করে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা আদায়ও করেছেন। এসব টাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও প্যানেল চেয়ারম্যান মিলে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। ভিডব্লিউবি কর্মসূচির দু:স্থ নারীদের তালিকায় বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের পরিষদের ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের স্ত্রী, ভাগনী এবং নিকট আত্মীয়-স্বজনদের নাম রয়েছে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানা যায়, ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে দু:স্থ নারীদের সংযুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। এরপর গত ৩০ জুন ইউপি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ট্যাগ অফিসার ও ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অনলাইনে প্রাপ্ত ১ হাজার ২৭ জনের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ৪৪০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা হয়।
প্রস্তুতকৃত তালিকা যাচাই করে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের তালিকায় বড়তাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানের ৫নং ওয়ার্ডের ৫৩ জনের নাম রয়েছে। তালিকায় প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচি, মামি ও খালার নাম দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেরই ৬-৮ বিঘা ফসলী জমি, পাকা বাড়ি, পুকুরও আছে। তালিকার ২১২ ক্রমিক নম্বরে স্থান পাওয়া মাফুজা খাতুন ও ২৩০ নং সেলিনা খাতুন তার আপন বড় ভাইয়ের দুই স্ত্রী।
২১০ নাম্বরে খোতেজা সম্পর্কে মামি এবং ২১৪ নাম্বরে রিমা বেগম, ২১৬ নাম্বরে আলেয়া বেগম, ২১৭ নাম্বরে আমেনা বেগম তার সম্পর্কে চাচি। ১৮২ নাম্বরে শেফালী বেগম সম্পর্কে খালা, ১৯১ নাম্বরে রাজিয়া সুলতানা সম্পর্কে ভাবী (চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী)। এসবই তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যনের সাথে যোগসাজস করে করেছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।
বড়তাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন,‘যখন চাল দেয় তখন এক লাইনে তারই আত্মীয় স্বজনদের দেখা যায়। গরীবের হক কিভাবে ধনীদের হাতে যায়। আবার ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরেই প্যানেল চেয়ারম্যানের ক্ষমতায় বড় ভাই শাহিনুর প্রকাশ্যে অন্যের চেয়ে কম দামে এসব চাল ক্রয় করেন। কেউ না দিলে ঝগড়া-বিবাদ লেগে যায়।
আরও পড়ুনঅভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন,‘উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তদন্তপূর্বক যাচাইবাছাই করে তালিকা প্রস্তুত করেছে। এব্যাপারে আমার কোনো হাত ছিল না। আমাকে নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা।’
বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, শফিকুল ও আমাকে নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা। তালিকা করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ট্যাগ অফিসাররা। আমরা শুধু সহযোগিতা করেছি। স্ত্রী ও স্বজনদের বিষয়ে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধির গরীব আত্মীয়-স্বজন থাকতেই পারে, তাহলে কি তারা এই তালিকায় স্থান পাবেনা ? তবে ওই তালিকায় শফিকুলের ভাগনীর নাম ছিল এটা সত্য, কিন্তু স্ত্রীর নাম ছিল না।’
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা নাসরিন জাহান বলেন,‘প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ট্যাগ অফিসারদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার স্ত্রী, নিকট কয়েকজন আত্মীয়, এক চিকিৎসক ভাগনীর নাম ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। অভিযোগের পর স্ত্রী ও ভাগনীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকায় স্বজনদের নাম রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তাদেরও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আল জিনাত বলেন,‘নীতিমালা অনুযায়ী তালিকা করা হয়েছে। কেউ যদি ভূল তথ্য দিয়ে নিকট আত্মীয়-স্বজনদের নাম যুক্ত করে থাকে, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন