আসন্ন নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় প্রত্যাশায় বিএনপি

ইসহাক আসিফ, ঢাকা অফিস : আগামী ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় প্রত্যাশা বিএনপির। আসন্ন এই নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির একমাত্র লক্ষ্যই এখন ঐক্য, জনগণ এবং দেশ গঠনের। এনিয়ে নেতাকর্মীদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নানা পরামর্শও দিচ্ছেন। নেতাকর্মীরাও, সারাদেশে ডোর টু ডোর গিয়ে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা তুলে ধরছেন। ভোটারদের আস্থা এবং সকল শ্রেণি মানুষের ভালোবাসা অর্জনের প্রতিও তারা জোর দিয়েছেন। জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু করতোয়াকে বলেন, যেকোন রাজনৈতিক দল ভূমিধস বা ঐতিহাসিক বিজয় প্রত্যাশা করে। কিন্তু সবাই পাবে সেই সুযোগ নেই।
এক্ষেত্রে এই সুযোগ বিএনপির রয়েছে। কারণ গত ১৭ বছর (ফ্যাসিস্ট) যে দলের নেত্রীকে জেল, জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। আর এদেশে গুম হওয়া নেতাকর্মীরা বিএনপিরই বেশি। সবমিলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ভূমিধস বা ঐতিহাসিক বিজয় প্রত্যাশা করতেই পারে। তিনি বলেন, বিএনপির মানুষের সাথে হৃদ্যতা আগাগোড়া সবসময়ই ছিল। দলের চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কথা বলছেন। ৩১ দফা এবং অতীতে দেশের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির যে অবদান, এসব মিলে ভূমিধস বা ঐতিহাসিক বিজয় প্রত্যাশা করছি।
এদিকে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ অবস্থায় নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বিএনপিও নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। অভ্যন্তরীণ একাধিক জরিপসহ নানা প্রক্রিয়ায় প্রার্থী চূড়ান্তে কাজ করছেন দলের হাইকমান্ড। আবার গুঞ্জন ছড়িয়েছে কোন কোন আসনে দলটি প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল অথবা সবুজ সংকেত দিচ্ছে। তবে, যেসকল আসনের প্রতিটিতে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী মাঠে তৎপর রয়েছেন। এ অবস্থায় প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে ‘জটিলতা নিরসনে’ উদ্যোগী হয়েছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, দশম সংসদ নির্বাচন একতরফা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন দিনের ভোট রাতে হয়েছে।
এবং সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও একতরফা হয়েছে। তাই এর আগের সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি পর্যালোচনা করেছে। তবে, এবার সংসদ নির্বাচনে কোন কোন নির্বাচনি এলাকায় বেশি মনোযোগ দিতে হবেÑসেটিও নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সেভাবেই দলটির নেতাকর্মীরা কাজ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে এলাকায় জনপ্রিয়, ক্লিন ইমেজসম্পন্ন ব্যক্তিদের (নবীন-প্রবীণ) দলীয় প্রার্থীর বিবেচনায় দেখছে বিএনপি। আবার এরপূর্বে দলটির যারা নির্বাচন করেছেনÑতাদের জায়গায় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে অপেক্ষাকৃত তরুণ, জনবান্ধব ও ইমেজধারীদের। পরামর্শকরাও বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে দলীয় মার্কা-ই যথেষ্ট নয়। ব্যক্তির ইমেজও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে বিএনপি। সেই অনুযায়ী প্রতিটি ভোটার টার্গেট করে দলটি নেতাকর্মীরা ডোর টু ডোর যাচ্ছেন। সম্ভাব্য সব প্রার্থীই নিজেদের মতো করে বিচ্ছিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ দায়িত্ব প্রাপ্ত) করতোয়াকে বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সব সময় সংগ্রাম ও আন্দোলন করেছে। একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় শাসন দিয়েছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। স্বৈরাচার হাসিনা সরকার ভোট ছাড়া সরকার ছিল। গণতন্ত্রেও যে পথ সেটি এখনো আসেনি। জনগণ ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটাররা উদগ্রীব হয়ে আছে।
আমরা ৩১ দফার যে রাষ্ট্রকাঠামো, সংস্কার দেওয়া আছে। এটা মানুষের কাছে, মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বুঝানো। যে বিএনপি দিনের ভোট রাতে করবে না। বিএনপি ভোটার ছাড়া নির্বাচন করবে না। সকলকে নিয়ে নির্বাচন করবে। পাশাপাশি যেন এই ৩১ দফা মানুষ বোঝেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডোর টু ডোর বলতে হাটবাজার, মানুষের দোকান থেকে দোকানে গিয়ে যা সর্বত্রই আমরা ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করে বলছি এখানে সকল শ্রেণি মানুষের আগামীর মুক্তির কথা বলা আছে।
আরও পড়ুনতিনি বলেন, ডোর টু ডোর যাওয়ার উদ্দেশ্যই হলো ৩১ দফার মধ্যে যা আছেÑসেটি মানুষকে বুঝানো হচ্ছে। যারফলে পছন্দের প্রার্থী, প্রতীক ও দল হিসেবে মানুষ বিএনপিকেই গ্রহণ করবে। দলের ঐতিহাসিক বিজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আশা করি মানুষ আমাদের বুঝতে পেরেছে। আগামীতেই মানুষ বিএনপিকে সমর্থন করবে, বিএনপিকেই বেছে নেবে এটা আমাদের প্রত্যাশা।
নওগাঁ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন করতোয়াকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেটা বলেছেন ইতোমধ্যে আমরা শুরু করেছি। আমরা নওগাঁর প্রতিটি আসনের ডোর টু ডোর যাচ্ছি। ভোটার ও সাধারণ জনগণ বিশেষ করে তরুণদের আস্থা অর্জন করতে দলের ঘোষিত ৩১ দফা নেতাকর্মীদের মাঝে তুলে ধরছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বুঝতে পারছি মার্কার (ধান) পাশাপাশি ব্যক্তি জনপ্রিয়তার বিষয়টিও রয়েছে। আমরা তৃণমূলের নেতারা মনে করি দেশের বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপি ঐতিহাসিক জয় প্রত্যাশা করতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা বলেছি রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা। এই দফাগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই দেশ ও জনগণের মৌলিক পরিবর্তন সম্ভব। এ প্রসেঙ্গ তিনি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বলেন, বিএনপির ৩১ দফা দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। ডোর টু ডোর গিয়ে ভোটারদের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বারবার এই কথা বলে থাকেন।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ করতোয়াকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের সারাদেশে ডোর টু ডোর গিয়ে আগামী দিনে জনগণের মুক্তির সনদ ৩১ দফা তুলে ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঐক্য সুদৃঢ় করার এবং আরো জনবান্ধব হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান বারবার একটি কথা বলেন। যা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি সেটি হলোÑজনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।
রিজভী বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। উপযুক্ত সময়েই দলের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বেছে নিয়ে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি একটি দেশের সর্ববৃহৎ দল। দেশের জন্য এ দলের বড় ভূমিকা রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির ঐতিহাসিক জয় প্রত্যাশা থাকতেই পারে।
মন্তব্য করুন