ফরিদপুরের সালথায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়ে উভয় পক্ষের অন্তত ১৪টি দোকান, চারটি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী বাজারে এ সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও সালথা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রব মোল্লার (৬৮) সঙ্গে তার ভাতিজা আওয়ামী লীগ সমর্থক মো. কাইয়ুম মোল্লার (৩৯) বিরোধ চলছিল। এলাকায় চাচা ও ভাতিজা দুটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন। তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত গত ইউপি নির্বাচনে চাচা আব্দুর রব ও ভাতিজা কাইয়ুম ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এরপর থেকে তাদের মধ্যে স্থানীয় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে।
সম্প্রতি যদুনন্দী নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমানকে হাতুড়িপেটা করে পদত্যাগে বাধ্য করান কাইয়ুম মোল্লার সমর্থকরা। পরে শিক্ষার্থীরা ফুলের মালা দিয়ে অধ্যক্ষকে কলেজে নিয়ে আসেন। অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার এ কাজে শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি সমর্থন দেন আব্দুর রব মোল্লা ও তার সমর্থকরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এরই জের ধরে সোমবার রাত ১০টার দিকে কাইয়ুম মোল্লার সমর্থকরা যদুনন্দী বাজারে এসে আব্দুর রব মোল্লার সমর্থক ফিরোজ মোল্লা ও কাইয়ুম মোল্লা নামে দুই ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে আহত করে এবং তাদের তিনটি দোকান ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে আব্দুর বর মোল্লার ২০০-২৫০ সমর্থক কাইয়ুম মোল্লার সমর্থকদের ধাওয়া দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় কাইয়ুম মোল্লার সমর্থকরা বাজার ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। পরে আব্দুর রব মোল্লার সমর্থকরা কাইয়ুম মোল্লার সমর্থকদের অন্তত ১৪টি বিভিন্ন পণ্যের দোকান ও চারটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত ন। আহতদের মধ্যে ফিরোজ মোল্লা ও কাইয়ুম মোল্লাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনা সম্পর্কে আব্দুর রব মোল্লা বলেন, ১০-১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে কাইয়ুম মোল্লা ও তার সমর্থকরা অতর্কিতভাবে আমার দুই সমর্থককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে এবং তাদের দোকানপাট ভাঙচুর করে। পরে খবর পেয়ে আমার সমর্থকরা ওদের ধাওয়া দিলে প্রতিপক্ষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। কাইয়ুমের কয়েকজন সমর্থকের দোকানে হামলা করা হয়েছে, এটা ঠিক। তবে ওরা আগে হামলা না করলে এমন ঘটনা ঘটতো না।
ঘটনা সম্পর্কে কাইয়ুম মোল্লা বলেন, আব্দুর রব মোল্লার সমর্থকদের একটি দোকানও ভাঙচুর করা হয়নি। এমনকি কাউকে মারধরও করা হয়নি। এ অভিযোগ মিথ্যা। বরং অতর্কিতভাবে আব্দুর রব মোল্লার সমর্থকরা আমার সমর্থকদের ১৪টি দোকান ও চারটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং দোকানে থাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যদুনন্দী বাজারে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে ওই বাজারে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সেনাবাহিনী দুইজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।