ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগ নেতাকে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের সুপারিশ

ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ী নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে গঠিত সিলেকশন বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড.মামুন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম শাওন আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রয়েছে- ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগকে অভিনন্দন জানানোর ছবি, অমর একুশে হল ছাত্রলীগকে নিয়ে ফেসবুক পোস্ট, নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার ছবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলকে ধন্যবাদ জানানোর পোস্ট।
সভাসূত্র জানায়, সভায় অস্থায়ী প্রভাষক শাওন আহমেদকে স্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।এছাড়া উপ- উপাচার্য মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিনকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও সিলেকশন বোর্ডে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠান। এ বিষয়ে অধ্যাপক নিলুফার ইয়াসমিন ও বোর্ডে আমন্ত্রণপত্রের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
সভাসূত্রে আরও জানা যায়, তাৎক্ষণিক শূন্য পদে দুইজনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও উপ -উপাচার্য বোর্ডের চার সদস্য কর্তৃক মেধা, ভাইভা পারফরম্যান্স (শিক্ষকতার গুণাবলীসহ) ও প্রকাশনার ভিত্তিতে প্রথম স্থানে থাকা প্রার্থী সাবরিনাকে বাদ দেওয়ার জন্য তিনি বোর্ড মেম্বারদের অনুরোধ করেন। অভিযোগ অনুসারে, তিনি ২ ও ৩ নম্বর প্রার্থীকেই নিতে অনুরোধ জানান, বিশেষ করে ৩ নম্বর প্রার্থী সাদিয়া -নাবিলাকে—যার ভাইভা পারফরম্যান্স ছিল দুর্বল এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষকতার যোগ্যতা ও প্রকাশনা ছিল না—তাঁকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন তিনি। বোর্ডের অন্যান্য চার সদস্যের প্রবল বিরোধিতার মুখে তিনি সাদিয়া নাবিলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তবে, কেন সাবরিনাকে নেওয়া হবে না—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রো-উপাচার্য বলেন, সাবরিনাকে নিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমস্যা হতে পারে,এমনকি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদেরও সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এই বক্তব্যে অন্যান্য সদস্যরা ভীত হয়ে গেলে তিনি সাবরিনাকে বাদ দিয়ে কেবল রোকেয়া আক্তারকে নিয়োগের সুপারিশ করেন এবং বাকি শূন্য পদটি পূরণের জন্য নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বোর্ডের একজন সদস্য জানান বিষয়টি সত্য। তবে আমি এ ব্যাপারে আর কোনো তথ্য আপনাকে দিতে পারবোনা। এ বিষয় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাওন আহমেদ বলেন, ওই সময় সবারই এরকম পোস্ট ছিল। আমি সহ যারা ভাইভা ক্যান্ডিডেট ছিল তাদের ও এরকম কার্যক্রম আছে। চাকরি স্থায়ী করণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
ভুক্তভুগি সাবরিনা আক্তার বলেন, আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে।
আমি যোগ্যতা সম্পূর্ণ থাকা সত্ত্বেও আমাকে বাদ দিয়ে অন্য একজন কে সুপারিশ করেছে। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, আমাকে বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে আরো জানতে সিলেকশন বোর্ডের আরেক সদস্যর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদ বলেন, যার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ জড়িত থাকার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাও। কারো মুখের কথায় তো কিছু হবে না। আর বিষয়টি প্রাথমিক অবস্থায় আছে এখনও সিন্ডেকেট উঠেনি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে সিন্ডিকেট মিটিং। যদি অভিযোগ পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা ও নিবে সিন্ডিকেট।
উল্লেখ্য, এর আগে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ -উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শিক্ষক নিয়োগ, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা করাসহ একাধিক অভিযোগ তোলে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধনের জন্য সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিল সংগঠনটি।
মন্তব্য করুন