ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদীন উদ্যানের ভেতরে গড়ে ওঠা মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক উচ্ছেদ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় জয়নুল উদ্যান এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও উচ্ছেদ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের আরও দুজন ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে অভিযান চালান। অভিযানে সহায়তা করেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
বন বিভাগের ময়মনসিংহে রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রিদুয়ানুল হক বলেন, ‘অবৈধ চিড়িয়াখানাটি জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল। এখানে পাঁচটি হরিণ, দুটি ময়ূর, একটি গাধা, কিছু ঘুঘু পাখি ও দুটি ইমু পাখি পাওয়া গেছে। এগুলো গাজীপুর সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ বলেন, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ, অর্থ পরিশোধ না করায় মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশের জমিতে করা শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল করে ভেকু দিয়ে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ হওয়া স্থানে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য লাইব্রেরি, খেলনা ও কিছু রাইড থাকবে। সেখানে বাগান করে দেওয়া হবে।
এর আগে ২০১৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পৌরসভা মিনি চিড়িয়াখানাটি সেলিম মিয়াকে ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। সেলিম মিয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দুলালের শ্যালক। চলতি বছরের ৮ মার্চ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন দুলাল।
সূত্র জানায়, সেলিম মিয়ার নামে পার্ক ইজারা নেওয়া হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ইজারার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ছয় লাখ টাকায় চিড়িয়াখানাটি ইজারা দিলেও মেয়াদ শেষে মাত্র তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়।
মিনি চিড়িয়াখানার পাশের জমিটি ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাসিক এক হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। এটিও ইজারা দেওয়া হয় সেলিম এন্টারপ্রাইজকে।
আরও পড়ুন
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই শতক জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও চুক্তিপত্রে শিশুপার্কের কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়।
বন বিভাগের যথাযথ অনুমতি না নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল মিনি চিড়িয়াখানাটি। মিনি চিড়িয়াখানাটিতে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে খাঁচায় বন্দি ছিল দুটি ভালুকও। এর মধ্যে একটির শরীরে পচন ধরে যায়। প্রাণীটির পায়ের অংশবিশেষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ক্ষতস্থানে ছিটিয়ে দেওয়া হয় হলুদের গুঁড়া। কিছুক্ষণ পর পর যন্ত্রণায় ছটফট করে ভালুকটি।
চলতি বছরের এপ্রিলে বিষয়টি নজরে আসে বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের। ৮ এপ্রিল বিকেলে ঢাকার বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মকর্তারা চিড়িয়াখানাটি পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যার দিকে সিলগালা করে দেন। এসময় মিনি চিড়িয়াখানায় অবৈধভাবে রাখা একটি অজগর সাপ, দুটি ময়ূর, পাঁচটি হরিণ, দুটি মদনটাক পাখি, একটি কুমির, দুটি ভালুক, একটি সজারু, পাঁচটি বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ ২৭ প্রজাতির দেশিয় প্রাণী জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় বন কর্মকর্তারা জানান, বন বিভাগের যথাযথ অনুমতি না নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল মিনি চিড়িয়াখানাটি। মিনি চিড়িয়াখানা ও চিড়িয়াখানাসংলগ্ন শিশুপার্কের ভূমি ইজারার চুক্তিপত্র বাতিল করে গত ২৬ জুন ইজারাগ্রহীতা সেলিম মিয়াকে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সেখানকার অবকাঠামো ও পশুপাখি নিজ হেফাজতে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। আজ অভিযান চালিয়ে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক উচ্ছেদ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।