কৃষকের আস্থার শীর্ষে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার
_original_1748359048.jpg)
ইসহাক আসিফ, ঢাকা অফিস: ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার (এনএসি)- কৃষিখাতের এক ‘জনপ্রিয়’ কোম্পানির নাম। বাংলাদশের কৃষিক্ষেত্রে কৃষকের ফসল ‘সুরক্ষায়’ উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই কোম্পানি এক অনন্য অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। খুব অল্পসময়ের মধ্যে এদেশের কৃষকের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের ‘প্রতীক’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। কোম্পানিটির বিস্তৃত দেশব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে। মেধা, প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেম দিয়ে দেশে প্রথম ‘এগ্রো কেমিক্যাল’ উৎপাদন কাজের হাত দিয়েছে। কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে গেছে ‘উৎপাদিত’ সকল পণ্য। যেমন: ধানবীজ, ভুট্রাবীজ, বিভিন্ন জাতের সবজিবীজসহ কীটনাশক-বালাইনাশক। এনএসি’র উতপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, এনএসি গোল্ড, নেক-সল্ট, প্যাকনো-ন্যাক, রুটোন, জনক রাজ, বায়ো-জীব, সোনার দানা, তুফান, ন্যাশনাল-সীডস, নির্ভয়, মেড-ইন বাংলাদেশ,মার্কার,স্টার্টার,কার্টাপ্রিড,এবাটিন,ফেনজেট,ডমিনেটর,এ ন্ট্রিব্লাইট,কমবি, নেকসুমিন,বীর,নিক্তি, উচ্ছেদ,ইউডার, হাইব্রিড ভূট্রা বীজ,বীর বল ইত্যাদি। দেশব্যাপী কোম্পানিটির অনেক পেশাদার লোকজন কাজ করছে। যারা ইন্ডাস্ট্রির পেশাদারিত্ব দিয়ে-এই কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ২০০২ সালে এক ‘স্বপ্নবাজ’ কৃষিবিদ কে.এস.এম মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার-এর পথচলা শুরু হয়েছিল। এখন এই কোম্পানি সফল (কৃষিখাত) বলে জানা গেছে। কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান একজন কৃষি বিজ্ঞানী হওয়ায় দেশের কৃষিতে যা প্রয়োজন তিনি সেই ধরনের কৃষি উপকরণ প্রথম এদেশে প্রবর্তন করেছেন। প্রতিযোগিতার বাইরে গিয়ে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করে তিনি কৃষি সেক্টরে অনন্য অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
আরেকদিকে, জাতীয় অর্থনীতিতে ‘অসামান্য’ অবদান রেখে এনএসি অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার বাংলাদেশের প্রথম এগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাক্টরিং প্লান সর্বপ্রথম চালু করেছে। ঘাস মারার আগাছা নাশক-এটা ‘চেঞ্জার ব্রান্ডে’ কোম্পানিটি সর্বপ্রথম এদেশে আমদানি করে পরিচিত করেছে। পরবর্তীতে সর্বপ্রথম উৎপাদনে গিয়েছে। বগুড়া ঐতিহাসিক একটা শিল্পনগরী। এই ঐতিহ্যকে আরও এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে-এনএসি। এই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফিজুর রহমান বগুড়ার সন্তান। সেদিক থেকে উৎপাদনের ফ্যাক্টরিগুলো বগুড়ায় স্থাপন করেছেন। এনএসি শুধু কৃষি উৎপাদনের মধ্যে ব্যবসা সীমাবদ্ধ রাখেনি- বরংঞ্চ,তারা ব্যবসায়ী ডাইভারসিফিকেশন করে নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে। তাদের ডাইভারসিফিকেশন ব্যবসার মধ্যে ওয়ান ফার্মা উৎপাদনকারী কোম্পানি রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী বগুড়া শিল্প নগরী গড়তে কোম্পানিটি নানান কর্মসূচী নিয়েছে বলে জানা গেছে। এনএসিতে দুই হাজারের অধিক মানুষ কর্মরত রয়েছে। এদের গবেষনালদ্ধ হাইব্রিড ধানের বীজ ন্যাশনাল-১, ন্যাশনাল-২, ন্যাশনাল-৩, ন্যাশনাল-৪, ন্যাশনাল-৫. ন্যাশনাল-৬ এগুলো দেশের জনপ্রিয় ধানের জাত হিসেবে কৃষকদের মাঝে পরিচিত পেয়েছে।
জানা যায়, হাওর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয় ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের। এদিকে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য লক্ষ্য, নির্ধারণও করেছে এনএসি। তাদের লক্ষ্য, দেশের প্রতিটি গ্রাম পর্যায়ে বৃহৎপরিসরে কার্যক্রম বিস্তৃত করার পাশাপাশি সম্ভাব্য নতুন দেশে পণ্য রপ্তানি করা। এছাড়া অর্ধকোটি কৃষককে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তরা মনে করেন, তাদের মডেল যদি সরকার, বেসরকারি খাত ও কৃষিবিদদের মধ্যে সহযোগিতার এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তবে, এদেশের কৃষিখাত সত্যিকারের রুপান্তরের পথে এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাবে টেকসই আধুনিক এবং মানবিক কৃষির পথ ধরে। বিশ্লেষকদের মতে, এনএসির মডেলটি প্রমাণ করে যে, কৃষিকে শুধু উৎপাদন নয়; সার্ভিস ও প্রযুক্তি ভিত্তিক খাত হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণ, প্রোগ্রাম ও ফার্ম ভিজিট কার্যক্রমে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার নামক একটি কোম্পানি সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া, মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও পরিবেশকের সঙ্গে কথা বলে ওই কোম্পানির বেশ সুনাম জানা গেছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক সজল ইসলাম মুসা জানান, দুবাই থেকে দেশে ফিরে এখন তিনি বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করছেন। তবে, দুই থেকে তিন বছর কৃষিকাজে (সবজি উৎপাদন) প্রত্যাশিত ফলাফল পাননি। একপর্যায় যখন তিনি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম তখন ‘ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার’-এর একজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে হঠাৎ করেই একজন কর্মকর্তার (এনএসি) সাথে আমার দেখা হয়। তার কাছে থেকে একটা এনএসি গোল্ড নামে বালাইনাশক ফ্রি পেয়ে জমিতে স্প্রে করার পর আমি সন্তোসজনক ফলাফল পেয়েছি।
আরও পড়ুনঅভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে মুসা বলেন, তাদের বালাইনাশক (বিশেষ করে মর্টার,এনএসি গোল্ড) যে উপকার করছে আমরা সেটা ভুলতে পারবো না। তিনি মনে করেন, প্রত্যেক কৃষকের উচিত ফসলে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার-এর বালাইনাশক ব্যবহার করা। একই উপজেলার পরিবেশক আব্দুল মমিন। মূলত তিনি একজন কীটনাশক ব্যবসায়ী।
আব্দুল মমিন বলেন, কৃষকের সমস্যার কথা শুনে প্রথমে আমি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের প্রোডাক্ট তাদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। এনএসি জানায়, বিগত ২০২৩ সালে মালদ্বীপে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষিবিদ কে. এস. এম. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এদেশের কৃষকের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য দরিদ্র, নিষ্পেষিত ও অবহেলিত কৃষক যাতে তার, প্রকৃত কৃষির উপকরণ দেশে উৎপাদিত পণ্যের দ্বারা তাদের ফসল উৎপাদন ও সুরক্ষা করতে পারেন। সেই উদ্দেশ্য ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার কৃষকের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, শুধু কৃষকের কাছে যে আমরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করবো তা নয় আমরা কৃষকের কাছে থেকেও পণ্য কিনতে চাই। আমরা কৃষককে প্রযুক্তি দিয়ে দেই। উন্নত প্রযুক্তিতে কৃষকের কৃষি ফসলের চাষ প্রণালী একদিকে তারা শিখছে এবং অধিক ফলন হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে কৃষকের কাছে শুধু কোম্পানির পণ্য বিক্রি হবে তা নয়। কৃষকের কাছে থেকে উৎপাদিত পণ্য কেনার কারণে যে দুইমুখী অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা চক্রের মধ্যে দিয়ে এদেশের কৃষকের দারিদ্রতা থাকবে না। তারা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হবেন। মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, স্বপ্ন আমি সেটাই বলবো যেটা হলো এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের জীবন যাত্রার মানের উপর সুবাতাস বয়ে যাবে। তাই আমারা স্লোগান দিয়েছি ‘ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার’-এসো স্বপ্ন ফলাই, ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার-বাংলার কৃষকের কোম্পানি।
মন্তব্য করুন