ভিডিও সোমবার, ১২ মে ২০২৫

অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ: বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

অবহেলা ও অপচিকিৎসায় বাংলাদেশের কর্পোরেট জগতের একজন আইকন, এসিআই লজিস্টিক  (স্বপ্ন) এর সাবেক পরিচালক, মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দোহা শিমুল (৪৮) এর  মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার ও  শুভানুধ্যায়ীরা। গত শনিবার, ১০ মে, ২০২৫ তারিখ, দুপুরে   ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে  ‘জাস্টিস ফর শিমুল’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। শামসুদ্দোহা শিমুলের (৪৮) স্ত্রী সায়মা সুলতানা, সন্তান আলিফ আল দোহা, আনিশা বিনতে দোহা ও তার ভাগনে এবং মামলার বাদী রিয়াদ ইসলাম নাঈম,মরহুমের বোন,ভগ্নিপতি,পরিবারের সদস্যবৃন্দ,বন্ধু,সহকর্মী,সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার সাধারণ মানুষ  এবং শুভানুধ্যায়ীরা   উক্ত  সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

মরহুমের স্ত্রী সায়মা সুলতানা লিখিত বক্তব্যে  অভিযোগ করে বলেন,  গত ২১ আগস্ট ২০২৪  খ্রিস্টাব্দ তারিখে (২০ আগস্ট দিবাগত রাতে ) রাজধানীর গ্রীন রোডে অবস্থিত কমফোর্ট হাসপাতাল  -এ নাকের সেপ্টোপ্লাস্টি অস্ত্রোপচারের চলাকালীন  অধ্যাপক ডা.জাহের আল-আমিন (বিএমডিসি রেজি.  নং- এ-১২৬৮৮) এবং এনেস্থেসিয়োলজিস্ট ইফতেখায়রুল কাওসার (বিএমডিসি রেজি. নং- এ-৫৭৩৯০) এর তত্ত্বাবধানে চরম অবহেলা ও অপচিকিৎসার ফলে অপারেশন থিয়েটারেই  শামসুদ্দোহা শিমুল মৃত্যুবরণ করেন ।  অপারেশনের সময় যথাযথ জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের অভাব, সময়মতো রোগীর পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য গোপন, অপারেশন থিয়েটারে প্রস্তুতির ঘাটতি এবং রোগীর মৃত্যুর পরে  সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা এই সব বিষয়সমূহের ভিত্তিতে  স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে এটি একটি অবহেলা এবং অপচিকিৎসাজনিত মৃত্যু। ভুক্তভোগীর পরিবার  বিভিন্ন ভাবে জানতে পেরেছে যে, শামসুদ্দোহা শিমুলের মৃত্যুর পেছনে অভিযুক্ত  চিকিৎসক ও হাসপাতাল কতৃপক্ষ  ময়না তদন্ত প্রতিবেদন  এবং তদন্ত কাজে প্রভাব বিস্তার করে  সঠিক বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।

এখানে আরও উল্লেখ্য যে, অধ্যাপক ডা. জাহের আল-আমিন এর বিরুদ্ধে আরও ভুল ও অপচিকিৎসাজনিত প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে এবং অতীতে তিনি এই মর্মে শাস্তিও ভোগ করেছেন। মরহুমের স্ত্রী সায়মা সুলতানা তার বক্তব্যে আরো  বলেন যে, আমি  বিশ্বাস করি বাংলাদেশে অনেক দক্ষ, মানবিক ও আন্তরিক চিকিৎসক আছেন। অনেক হাসপাতাল ও চিকিৎসক  আছেন যাদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে রক্ষা পায় হাজার হাজার প্রাণ। তাদের প্রতি আমার  শ্রদ্ধা, আস্থা ও ভালোবাসা অটুট। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কমফোর্ট হাসপাতাল, ডা. জাহের আল-আমিন এবং এনেস্থেসিয়োলজিস্ট ইফতেখায়রুল কাওসার এর মতো  কিছু চিকিৎসকের গাফিলতি সেই আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। তাদের  অবহেলা ও অপচিকিৎসার কারনে  শুধু আমি  আমার স্বামীকে  হারাইনি, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সুনামও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন কয়েকজনের জন্যই হাজারো ভালো চিকিৎসকের সম্মানও আজ প্রশ্নের মুখে। আমি  চিকিৎসা সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি যে , আমাদের এই অবস্থান দেশের সকল চিকিৎসকদের প্রতি নয়। আমাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে শুধুমাত্র সেইসব চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যারা দায়িত্বে অবহেলা, গাফিলতি ও অপচিকিৎসার  মাধ্যমে রোগীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন। কমফোর্ট হাসপাতাল, অধ্যাপক ডা. জাহের আল-আমিন এবং এনেস্থেসিয়োলজিস্ট ইফতেখায়রুল কাওসার তাদের মতো অসাধু ও উদাসীন কিছু চিকিৎসকের কারনেই পুরো পেশাটির সুনাম আজ প্রশ্নের মুখে। আমি দেশের প্রচলিত  আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে  সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই যেন অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হয়।

শামসুদ্দোহা শিমুলের পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীরা, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল এবং দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি বিনীত এবং  দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানায়, যেন তারা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন:

চিকিৎসাগত অবহেলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত: চলমান মামলার (মামলা নং- ০২(০৮)২৪, ধারা ৩০৪-ক/৩৪, কলাবাগান থানা) তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত  শামসুদ্দোহা শিমুলের মৃত্যুর পেছনে যে চিকিৎসক, কমফোর্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ,  হাসপাতাল কর্মী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের  নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক  কঠিন শাস্তির আওতায়  আনা হোক।

দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ: যারা দায়িত্বে থেকেও দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন (সার্জন ও এনেস্থেসিয়োলজিস্ট) , তাদের বিরুদ্ধে BMDC-এর আওতায় চিকিৎসা লাইসেন্স স্থায়ী ভাবে  বাতিল করার মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

আরও পড়ুন

কমফোর্ট হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা: অপারেশন থিয়েটারে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের অভাব, প্রস্তুতির ঘাটতি এবং সময়মতো রোগীর অবস্থা সম্পর্কে তথ্য গোপনের দায়ে সংশ্লিষ্ট উক্ত  হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

ভবিষ্যতের জন্য নীতিগত সংস্কার:  এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থায় কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা হোক।

শোকসন্তপ্ত পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: দ্রুত আইনি    প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হোক।

শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য  ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ: দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সঠিক তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে  শোকসন্তপ্ত পরিবারের  ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে “জাস্টিস ফর শিমুল” (শিমুলের জন্য ন্যায়বিচার ) ব্যানারে   শামসুদ্দোহা শিমুলের শুভানুধ্যায়ীরা জোরালোভাবে দাবি জানায় যে, উক্ত ঘটনার সাথে  সংশ্লিষ্ট সকল চিকিৎসক, স্টাফ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সঠিক  তদন্তের আওতায় এনে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অবহেলাজনিত মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং জনগণের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বজায় থাকে। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য এই ধরনের অবহেলা ও অপচিকিৎসা  জনিত মৃত্যুর  বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর ভূমিকা অপরিহার্য। শামসুদ্দোহা শিমুলের মৃত্যু যেন অবহেলাজনিত মৃত্যুর  একটি সংখ্যা হয়ে না থাকে বরং তা যেন দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের সূচনা করে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৮ বছরে এমন হারের মুখে পড়েনি ম্যানইউ

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার বাবা 

রোহিতের পর টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বললেন কোহলি

দেশের ২১ জেলায় ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্র্ড

সীমাবদ্ধতার দোহাই দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে থাকলে চলবে না : প্রধান উপদেষ্টা