ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে জামায়াতের প্রীতি সমাবেশ
আমরা যা করতে পারিনি সেটা জামায়াত করছে: গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক

বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরকে নির্যাতন থেকে রক্ষা এবং তাদের কল্যাণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াসং বাংলাদেশ (আইডিবি) মিলনায়তনে জামায়েতে ইসলামী আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে গোবিন্দ বলেন, “আজকে স্বাধীন বাংলাদেশেও হিন্দুরা নির্যাতিত। এটা কেনো? হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কিছুটা হলেও হীনমন্যতায় ভোগেন। যে কাজ আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা করতে পারিনি সেটা জামায়াতে ইসলামী করছেন। তারা ভোট বা ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার প্রত্যাশায় এটা করেনা।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, “জামায়াতের দুজন মন্ত্রী ছিলেন। তারা যে সৎ ও আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নজিরবিহীন। এখন আমরা জিম্মিদশা থেকে রক্ষা পেয়েছি। সেজন্য আমাদের সম্প্রদায়ের নেতারা যাতে কথা বলতে পারে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেজন্য সংরক্ষিত আসন এবং পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। জামায়াতে ইসলামীও কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের নেতাদেরকে বিচার বিভাগীয় হত্যা করা হয়েছে।”মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায় বলেন, “জামায়াতে ইসলামী দখল করেনা, বরং যারা বলে হিন্দুদের পক্ষের দল তারা কয়টা বাড়ি দখল করেছে সেটাও দেখেন। তিনি সংসদে সংখ্যানুাতিক আসন বরাদ্দের প্রস্তাব দেন।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, “৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের পাশে ছিলেন বলে আমরা সাহস পেয়েছিলাম। জামায়াতের আমির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন। তার বক্তব্যে আমরা সাহস পেয়েছিলাম।” তিনি বলেন, আমরা চাই ভবিষ্যতেও জামায়াত আমাদের সঙ্গে থাকবেন। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবি রয়েছে। আমরা এগুলো আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখতে চাই।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “২০১৮ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের ইশতেহারে ৫ দফা সংযুক্ত করা ছিল। কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করেনি। চব্বিশের নির্বাচনেও ওই দফাগুলো ছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেনি। বিগত ৫৩ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর যত হামলা হয়েছে একটিরও আমরা বিচার পাইনি। এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, এজন্য আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।”
আরও পড়ুন
মন্দিরে কোনো মুসলমান হামলা করেনি— দাবি করে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর আমাদের বিভিন্ন মন্দিরে ও অনেকের বাড়িতে হামলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো তো কোন মুসলমান করেনি, মাদরাসার প্রিন্সিপাল করেনি। কারা হামলা করেছেন সকলে জানেন। আমরা তাদের বিচার চাই। আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই। জামায়াত কোনো বৈষম্য রাখবেনা বলেই আমরা বিশ্বাস করি।”
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের অনুপম বড়ুয়া বলেন, “জামায়াত আমির যে বক্তব্য রাখেন সেটি দেশকে জাগ্রত করে নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখায়।”
সিদ্ধেশ্বরী সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ও পুলিশের সাবেক ডিআইজি নির্বাক চন্দ্র মাঝি বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শাসনের পর একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জামায়াত নেতা-কর্মীরা অভয় দেওয়ার কারণে আমরা নিরাপদে বাংলাদেশে বসবাস করতে পেরেছি। ৫ আগস্টের পর পর জামায়াতের আমির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সারাবিশ্বের মানুষ দেখেছেন। জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি করেনা। তারা নেশাখোরও না। এসব কথা বলার কারণে আমার পদোন্নতি হয়নি। এগুলো গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রিপোর্ট করেছিল।”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নেতা লিটন কুমার বড়ুয়া, ব্যাপ্টিস্ট চার্চের বাস্তুর তপন রায়, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের স্বরুপানন্দ ভিক্ষু, শুভাশিস, পল্টন দাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ বিভিন্ন ধর্মের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
মন্তব্য করুন