প্রযুক্তি খাতের একজন সফল নারী সৈয়দা তাহিয়া হোসেন

নিজের আলোয় ডেস্ক ঃ নানা বাধা-বিপত্তি পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও কুসংস্কারকে তুচ্ছ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এখন নারীরা কর্মক্ষেত্রের উচ্চ আসনে। সরকারি-বেসরকারি সবক্ষেত্রেই নারীদের অংশীদারিত্ব বাড়ছে।
দেশে বিকাশমান তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নারীদের সমানতালে অংশগ্রহণ বাড়ছে। অবদান রাখছে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও। টেলিকম প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার খাত ও বিভিন্ন স্টার্টআপে উচ্চ পদে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে অনেক নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠছে। অনেকেই ঘরে বসেই ব্যবসা করছেন। হচ্ছেন সফল। নারীদের এমন অংশগ্রহণে কেউ কেউ চূড়ান্ত সাফল্য দেখিয়েছেন। তেমনি একজন সফল নারী সৈয়দা তাহিয়া হোসেন। যিনি দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টেলিকম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার (সিএইচআরও) হিসেবে।
নারীর এগিয়ে চলা, টিকে থাকা এবং সফল হওয়াসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে তার সঙ্গে আলাপচারিতায়। সিএইচআরও যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। টেলিকম খাতের মতো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেটা আরো চ্যালেঞ্জিং। তবে সৈয়দা তাহিয়া হোসেন শুনিয়েছেন অভয়ের বাণী। সিএইচআরও পেশায় সফল হতে হলে আগে ঐ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাটা বুঝতে হবে। ব্যবসায়িক খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আপনি যত দ্রুত আয়ত্ব করতে পারবেন, আপনি তত ভালো করতে পারবেন।
এখানে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ থাকে। কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাটি বুঝতে পারলে আপনি বুঝে যাবেন প্রতিষ্ঠানে চাহিদাগুলো কী কী। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা যেমন আছে, তেমনি মানুষের চাহিদাও আছে। হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসারের এ দুটো বিষয় নিয়ে আবার একসাথে কাজ করতে হয়। আর এটা সফলভাবে করতে হলে অনেক বেশি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আর এক্ষেত্রে নারীদের চ্যালেঞ্জটা আরো বেশি। এই সেক্টরে নারীদের হতে হয় অনেক বেশি সহনশীল। থাকতে হবে প্রতিনিয়ত শেখার মানসিকতা। ব্যবসা আর মানুষকে যেমন শিখতে ও চিনতে হবে-তেমনি প্রতিষ্ঠানের এইচআর পলিসি কী, সেটাও বুঝতে হবে। কারণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আলাদা আলাদা এইচআর পলিসি। পাশাপাশি নতুন যে পলিসিগুলো আসবে সেগুলোও বুঝে নিতে হবে। শেখার আগ্রহটা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
সৈয়দা তাহিয়া হোসেন জানান, এইচআর বিভাগে যারা কাজ করে তাদের মধ্যে সহমর্মিতার মনোভাব থাকতে হবে। কারণ এইচআর বিভাগকে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আবার অনেক সময় কর্মীবান্ধব অনেক কাজ করতে হয়। কর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা না থাকলে এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরটা এখন নতুন দিকে যাচ্ছে বলেন মত দেয় টেলিকম খাতে বড় প্রতিষ্ঠানের এই কর্তাব্যক্তি। ডিজিটালাইজেশনের যুগে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। টেলিকম খাতে ব্যবসায়ী খাতে বিরাট একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনএর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নারীদের নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন লোক হায়ার করি, তখন আমরা বেশ চ্যালেঞ্জ ফেস করি। অনেক সময় আমরা যেমন চাই তেমন লোক পাই না। বা পেলেও সেটা কাজের ক্ষেত্রে ততটা প্রতিফলন দেখি না। নারীদের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা আরো বড়।’ টেলিকম খাতে নারীদের বিষয়ে সৈয়দা তাহিয়া হোসেন বলেন, ‘টেলিকম খাতে নারীদের আলাদাভাবে দেখা হয় না। এ খাতে নারী সমান সুযোগ সুবিধা পায়। এখানে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য নেই। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা যদি বলি তাহলে বলব আমি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি। নারীদের লজিক যদি ঠিক থাকে তাহলে টেলিকম খাতে টিকে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। প্রযুক্তি সেক্টরে নারীরা তাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে পারেন নিঃসংকোচে।’
নারী হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধতার মুখোমুখি হতে হয় বলে জানান তিনি। তার মতে, কোনো কোম্পানিতে একজন পুরুষ ও নারী একই সঙ্গে জয়েন করলে পুরুষ সহকর্মীকে প্রথম দিন থেকে অন্য কর্মীরা মেনে নেয়। তবে নারীদের ক্ষেত্রে দক্ষতা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করে শোনানোর ব্যবস্থা করতে হয়। টেলিকম খাতে এটা কম থাকলেও অন্যান্য অনেক খাতেই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
নারীদের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। একই সঙ্গে ঐ নারীকেও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি অনেক নারী আছে চ্যালেঞ্জ নিতে চায় না। তারা মনে করে আমি যেখানে আছি ভালো আছি। আরো বেশি চ্যালেঞ্জ নিলে চাকরিটা আর চালিয়ে যেতে পারব না। আর প্রতিটি কাজের ওনারশিপ নিতে হবে। না হলে নারীদের এগিয়ে যাওয়াটা মুশকিল হবে। আরেকটা কথা নারী হোক, পুরুষ হোক সহকর্মীদের শ্রদ্ধার চোখে দেখতে হবে। তাহলেই কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে নারীরা।
মন্তব্য করুন