ভিডিও শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ

কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ, ছবি: দৈনিক করতোয়া

ঈদুল আজহা আসন্ন। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে সারাবিশ্বে মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন। বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহায় লাখ লাখ গরু, ছাগল, মহিষ, উট কোরবানি করা হয়। বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে পশু কোরবানি।

পশুর চামড়া রপ্তানি করে বাংলাদেশ যেমন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে তেমনি কোরবানির পশু কেনাবেচার ফলে দেশের অর্থনীতিতে দেশি মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। পশু বিক্রির টাকা দিয়ে কৃষক নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখে এবং ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো আর্থিক সফলতা অর্জন করে। দু:খজনক ব্যাপার হলো, গত কয়েক বছর যাবত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পশু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতির নামে নিষিদ্ধ গ্রোথ হরমোন ও স্টেরয়েড ড্রাগের অবাধ ব্যবহার করে আসছেন।

এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু মোটাতাজা করার প্রক্রিয়া। ঈদের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয় এ কার্যক্রম। একশ্রেণির অসাধু খামারি পশু মোটাতাজাকরণে নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেন ও স্টেরয়েড হরমোন প্রয়োগ করছে। এসব পশুর মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এক শ্রেণির লোভী মানুষের কাছে জনস্বাস্থ্য কীভাবে জিম্মি হয়ে পড়ছে কোরবানির গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর হরমোনের ব্যবহার তারই প্রমাণ। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ করে গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণের চেষ্টা চলছে ব্যাপকভাবে।

স্টেরয়েড জাতীয় হরমোনের কল্যাণে গরু-ছাগল মোটা করে তা দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মোটাতাজাকরণের জন্য গরু-ছাগলকে উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড খাওয়ানোর ফলে এর মাংস খাওয়া মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, স্টেরয়েড দ্বারা মোটাতাজাকৃত পশুর মাংস খেলে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধমনি বিকল হয়ে হৃদরোগ এমনকি ব্রেনস্ট্রোকও হতে পারে। এ ধরনের পশুর মাংস খেলে কিডনি ও লিভার বিকলসহ পঙ্গুত্বের আশঙ্কাও থাকে।

স্টেরয়েড ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে গরুর দেহ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। তার দেহের চর্বি কোষগুলো বাড়ে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় পশুর হৃৎপিন্ড, কিডনি ও যকৃত, কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অনেক সময় এসব ওষুধ সেবনে পশু হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারাও যেতে পারে।

আরও পড়ুন

এ জাতীয় গরুর মাংস যদি মানুষ নিয়মিত গ্রহণ করে, তাহলে মানুষের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি প্রবেশ করার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় রোগী মোটা হয়ে যায়, ফলে নানা ধরনের জটিলতা আরও বাড়ে।

পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়, মোটাতাজাকরণের পাশাপাশি গরু এক হাট থেকে দূরবর্তী আরেক হাটে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্যাবলেট ছাড়া ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেনাক, কেটোপ্রফেন ইনজেকশন ও স্টেরয়েড। পশু মোটাতাজাকরণে নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ ইউরিয়া, স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ যেমন ট্যাবলেট ডেকাসন, ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন, বেটনেনাল, কর্টান, স্টেরন, অ্যাডাম ৩৩ ও ইনজেশন ডেকাসন, ওরাডেক্সন ইত্যাদি ব্যবহার করছে অর্থলোভীরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মোটাতাজাকৃত গরুর মাংস একটি নীরব ঘাতক। ধীরে ধীরে এটি মানুষের জীবন্ত প্রদীপ নিভিয়ে দেয়। গবাদি পশুর খাদ্য সংক্রান্ত আইন রয়েছে কিন্তু তারপরও এ ঘটনাগুলো প্রকাশ্যেই ঘটছে। ক্ষতিকর ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করা আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। কিন্তু সবই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।

কারণ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দেশে বৈধ ও অবৈধ অনেক গরু ঢুকছে বাংলাদেশে। কিন্তু এসব পয়েন্টে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এসব গরু রোগমুক্ত কিনা-তা পরীক্ষা করে দেখা হয় না।

অতিরিক্ত মুনাফার লোভে এক শ্রেণির অসাধু পশু ব্যবসায়ী নিজেরাই যেন পশুতে পরিণত হয়ে পড়েছেন। আমরা আশা করব, এদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবি; ৩ দিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় চেক জালিয়াতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি শিক্ষক গ্রেফতার

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে হিমাগারে আলু রাখতে ছয় উপজেলার কৃষক চরম বিপাকে

ডিবির হাতে যশোরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ‘ভাইপো রাকিব’ আটক

মহিপুরে স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ

কুড়িগ্রামের চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক সাত মাস ধরে অনুপস্থিত