বাকশক্তি হারিয়ে আবু বকরের জীবন এখন বিভীষিকাময়

২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল আবু বকর। মাত্র এক বছর আগেও সে বন্ধুদের সঙ্গে হাসিমুখে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যাতায়াত করত। তার কৃষক বাবা মো. আবুল খায়েরের স্বপ্ন ছিল, ছেলে বড় হয়ে পরিবারের অভাব দূর করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ধূলিসাৎ।
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে বাকশক্তি হারিয়ে আবু বকর এখন বিভীষিকাময় জীবন কাটাচ্ছে।
আবু বকর, দক্ষিণ গুনাইঘর ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের বাসিন্দা। গত ৪ আগস্ট, ২০২৪, শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শত শত শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগ দেয় সে। আন্দোলনের ব্যানারে তার উপস্থিতি ছিল স্পষ্ট।
হামলাকারীরা তাকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। মস্তিষ্কের আঘাতের কারণে বাকশক্তি হারিয়ে আবু বকর এখন এক ভয়াবহ জীবনযাপন করছে।
সম্প্রতি আবু বকরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় বসে সে মোবাইলে নিজের ওপর হামলার ভিডিও দেখছে। নাম জানতে চাইলে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়, শুধু আব্বা-আম্মা বলতে পারে, অন্য কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না। আন্দোলনে আবার যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করলে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
আরও পড়ুনতার মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘ছেলে কথা বলতে পারে না, মাঝে মাঝে কাউকে চিনতে পারে না। গোসল করিয়ে দিতে হয়, খাওয়াতে হয়। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে, কিছু বললে চেয়ে থাকে, মাঝে মাঝে কাঁদে। আমার বড় ছেলে লিভার ক্যান্সারে ভুগছে, ছোট ছেলে এই অবস্থা। যা কিছু ছিল, বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি। এখন আর পারি না। ছয় মাস হাসপাতালে রেখে বাড়ি এনেছি, এখনো অনেক চিকিৎসা বাকি। বিদেশে চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো আমার ছেলে আগের মতো হতো।
আবু বকরের বড় ভাই মো. আলী বলেন, ‘আমি নিজে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমার চিকিৎসা চলে না, তার ওপর ভাইয়ের এই অবস্থা। আগে কথা বলতে পারত, এখন শুধু আব্বা-আম্মা বলে। তার নীরব আর্তনাদ দেখে বুক কেঁপে ওঠে। চিকিৎসার জন্য আমাদের আর কিছু নেই। বিদেশে চিকিৎসা করালে হয়তো আগের মতো কথা বলতে পারত। সরকারি ভাতা পাই না। প্রথমে দুই লাখ টাকা পেয়েছিলাম, তা চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে। তাকে ভাতার তালিকায় সি ক্যাটাগরি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে তারা সিভিল সার্জন অফিসে যেতে বলে। আমরা কাগজপত্র জমা দিয়েছি।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ বলেন, ‘আবু বকরের সব কাগজপত্র দেখেছি। আমাদের মেডিক্যাল বোর্ড কাগজপত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আবু বকরের জীবন এখন অনিশ্চয়তায় ডুবে আছে। তার পরিবার অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় ভুগছে, আর চিকিৎসার অভাবে আবু বকরের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সঠিক চিকিৎসা ও সহায়তা পেলে হয়তো সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত।
মন্তব্য করুন