ভিডিও সোমবার, ০৫ মে ২০২৫

মাদকের আগ্রাসন

মাদকের আগ্রাসন, প্রতীকী ছবি

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, শুধু মাদকের জন্য অনেক দেশ কিংবা অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। মাদকের বি¯ৃÍতির কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শোচনীয় খুনাখুনি নৈমিত্তিক ঘটনা। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশে মাদকের বিস্তৃতি দেখে সচেতন মহল থেকে এমনই নানা আশংকার কথা বলা হচ্ছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান।

মাদক নিয়ে সমাজ ভীষণ উদ্বিগ্ন। সরকারের উদ্বেগও কম নয়। কিন্তু সরকারের উদ্বেগ যদি যথাযথ হতো, তাহলে এত দিনে এ সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান না হলেও উদ্বেগের অবসান ঘটত। কোথাও কোনো ঘাটতি নিশ্চয়ই রয়েছে। বিগত দেড় দশকে পতিত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিরাই মাদক ব্যবসাকে সারাদেশে বিস্তৃতি করেছে। দেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী টেকনাফের সাবেক আওয়ামী এমপি বদির কথা দেশবাসী ভুলে যাননি।

সারা দেশজুড়ে এমন বদির সংখ্যা অসংখ্য। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এরা টাকার লোভে জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ফলে গণমাধ্যমের রিপোর্ট, সেমিনার-আলোচনা, প্রতিরোধমূলক সাংস্কৃতিক প্রচারণা, সামাজিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ এবং পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানের পরও মাদকের বিস্তৃতি বাড়ছে বই কমছে না। সমাজের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে।

মাদকের ভয়াবহ বিস্তার দেশের সবাইকেই উদ্বিগ্ন করেছে। এর বিষাক্ত ছোবল অকালে কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী হচ্ছে বিপথগামী। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশে মাদক কারবারে জড়িত ৬৬ হাজার জনেরও বেশি কারবারি। তাদের কেউ মাদকের কারবারি, কেউবা পৃষ্ঠপোষক। নিষিদ্ধ এই কারবারে জড়িত ব্যক্তিরা বছরে পাচার করছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এসব ব্যক্তির তালিকা ধরে সমন্বিত অভিযানের পরিকল্পনা করছে সরকার। গ্রেফতারের পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হবে তাদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। মাদক নির্মূল করতে প্রয়োজন আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া। মাদক কেনাবেচার অর্থ পাচারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম আর এশিয়ায় শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসব তথ্য দেশের পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে।

পৃথিবীর ভয়াবহতম বিপদ মাদকদ্রব। একটি জাতি গঠনের প্রধান দায়িত্ব তরুণদের। আর মাদকের ছোবলের প্রধান শিকার তরুণরাই। আমাদের সমাজেও আশংকাজনক হারে বাড়ছে মাদকের ব্যবহার। সরকারের নানা রকম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। হাতে হাতে ঘুরছে নানা নামে, নানা রকম মাদকদ্রব্য। শহরের অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও হাত বাড়ালেই মিলছে মাদকদ্রব্য।

আরও পড়ুন

আর এর ভয়াবহতায় জাতি হিসেবে ক্রমেই পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। মাদকদ্রব্য দেশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ছে প্রধানত সীমান্ত এলাকা দিয়ে। সীমান্তবর্তী দুটি দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে অবাধে দেশের ভেতরে ঢুকছে নানা রকম মাদকদ্রব্য।

মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের এখনই শুধু সচেতন নয়, কঠোর অবস্থান নেয়াও প্রয়োজন। সঙ্গত কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা বিগত সরকারের সময় আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়েছিল- যা এখনও নির্মূল করা যায়নি। আমরা কি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের সন্তান মাদকের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে? প্রতিটি শিশুই আমাদের সম্পদ।

প্রতিটি সন্তানের মাঝেই আমাদের ভবিষ্যৎ। আগামী প্রজন্মকে যদি আমরা সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে নিজেদেরই ধ্বংস ডেকে আনব। সাময়িক লোভ, মোহ আর নগদ প্রাপ্তির জন্য যারা দায়িত্বে অবহেলা করছেন তারাও একদিন ক্ষতিকর প্রভাবে ধ্বংস হতে বাধ্য। কারণ মাদকাক্রান্ত কেউ শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির অভিশাপ বয়ে আনে।

মাদকের ভয়াবহতা থেকে জাতিকে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। যাদের হাতে দায়িত্ব এ ক্ষেত্রে তাদের কঠোরতা এবং কর্তব্য নিষ্ঠা যেমন জরুরি উৎসের সন্ধানের মাধ্যমে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা যেমন জরুরি, তেমনি আমাদের সবাইকেই নিজের নিজের অবস্থান থেকে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ায় আ‘লীগ নেতা ডা মিল্লাতকে আটক করে ডিবিতে সোপর্দ করলেন এনসিপি নেতারা

বগুড়ার নন্দীগ্রামে চার কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় ভোগান্তি লাখো মানুষের

‘তুমি রবে নীরবে’ মিউজিক ভিডিওর দৃশ্যে সহশিল্পীর সঙ্গে মৌ

সাবলিা কী পারবনে

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় স্ত্রীর যৌতুকের মামলায় স্বামী গ্রেফতার

এবার নিজের প্রথম আইটেম সং নিয়ে তামান্না প্রমি