উত্তরাঞ্চলের তিন জেলায় টর্নেডোর আঘাত ১১শ’ বাড়িঘর লন্ডভন্ড, আহত ১৫

করতোয়া ডেস্ক: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোর আঘাতে তিন উপজেলার প্রায় ১১শ’ বাড়ি ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই সময়ে ১৫ জন আহত হয়েছে । গতকাল রোববার দিনের বিভিন্ন সময় বয়ে যাওয়া টর্নেডোর আঘাতে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়।
আমাদের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় টর্নেডোর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে দুটি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি। এতে কমপক্ষে পাঁচ জন আহত হয়েছেন।
রোববার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শ্রুতিধর ও চর নোহালীর ওপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়। আহতরা হলেন, শ্রুতিধর গ্রামের বাদশা মিয়া (৪০), মাহমুদ মিয়া (৭০) শহিদুল ইসলাম (৪৬),রফিকুল আলম (২৩) ও সাইফুল ইসলাম (৪৫)। তারা কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টি চলছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে শ্রুতিধর ও চর নোহালী গ্রামে আঘাত হানে টর্নেডো। এতে দুই গ্রামের প্রায় শতাধিক টিনসেট, আধাপাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে। উপড়ে পড়েছে বেশ কিছু বড় গাছ। গাছের ডাল ও টিন পড়ে আহত হয়েছেন তিনজন। তাদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
কথা হলে ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, মধ্য শ্রুতিধর ও চর নোহালী গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবারের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৪৫ সেকেন্ডের ঘুর্ণিঝড়ে প্রায় ৩শ পরিবারের বাড়ি ঘর লন্ডভন্ড হয়েছে। গত শনিবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। রোববার ভোরে ৪৫ সেকেন্ডের ঝড়ে ৩টি ইউনিয়নের বড়পলাশবাড়ী পাড়িয়া ও বড়বাড়ী ইউনিয়নে ঘুর্ণিঝড়ে প্রায় ৩ শতাধিক কাচা বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে, কয়েকশতাধিক গাছ ভেঙ্গে গেছে এবং উপরে পরে গেছে। সরে জমিনে দেখা গেছে বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিনদুয়ারী কয়কুড়ি গ্রাম মোড়লহাট, বোবড়া গ্রাম ও জিয়াবাড়ী গ্রামের বাড়ীঘর গাছপালাসহ ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মোড়লহাট জনতা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এর প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল ইসলাম জানান, ১৫৫ ফিট টিনসেডের একটি পাকা ঘরের টিনের চালা উড়ে গিয়ে গাছের ডালে লেগে থাকে এবং বিদ্যালয়ের সাড়ে ৩ শতাধিক মেহগনি গাছ ভেঙ্গে গিয়ে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উক্ত স্কুলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী শাহরিয়ার পরিদর্শন করেন। বড়বাড়ী ইউনিয়নের নরবাগ গ্রামের ১৫টি পরিবারে বাড়ীঘর, গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। পাড়িয়া ইউনিয়নের পিয়াজুপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় ২১০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও পাকা ধানসহ বিভিন্ন ফসলাদী ঘুর্ণিঝড়ের কারণে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়াও রায়মহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছপালাসহ ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের ৫শত ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়ছে। প্রতিটি পরিবারে চাল ও টিন বরাদ্দের জন্য উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মফিজুর রহমান ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পূর্ণবাসনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের লন্ডভন্ড হয়েছে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে প্রায় সাতশতাধিক বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘর ও গাছের নীচে চাপা পড়ে আহত হয়েছে ১০ জন।, ঝড়ে ভেঙ্গে পড়েছে দোকানপাট, গাছপালা, বিদ্যুতের খুটি। নুইয়ে পড়েছে ধান ক্ষেত।
বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার নোহালী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে।
নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, রোববার সকালে বৃষ্টির সাথে প্রচন্ড ঝড়ে ইউনিয়নের বাগডহরা, বৈরাতি, পূর্ব কচুয়া, পশ্চিম কচুয়া, নোহালী, চর নোহালীসহ বিভিন্ন গ্রামের ইপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে পাঁচ শতাধিক বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে পড়ে বিপুল পরিমাণ ফলদ ও বনজ গাছ। মাটিতে নুয়ে পড়ে ধান ক্ষেত। চেয়ারম্যান জানান, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে বৃষ্টির মধ্যে নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন করছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের সদস্য রেজাউল হক জানান, ঝড়ে ইউনিয়নের খামার মোহনা, কুতুব পাড়া, কুতুব গণেশসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দুইশতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। ঘর চাপা পড়ে এক কৃষকের দুইটি গরু মারা গেছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় এসব এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজিবুল করিম জানান, ঝড়ে এই দুই ইউনিয়নের প্রায় সাতশতাধিক বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দুর্গত এলাকায় জরুরী খাদ্য সহায়তা হিসেবে শুকনো খাবার প্রদান করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করার নির্দেশ করা দির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, উপজেলার কিছু এলাকায় ঝড়ে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে। জরুরী খাদ্য সহায়তাও প্রদান করা
মন্তব্য করুন