ভিডিও বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫

ওষুধ রপ্তানিতে সাফল্য

ওষুধ রপ্তানিতে সাফল্য

ওষুধ শিল্পকে দুনিয়া জুড়ে দেখা হয় সমীহের চোখে। সে শিল্পে বাংলাদেশ এখন এক সম্ভাবনার নাম। স্বাধীনতার পর দেশ যেসব শিল্পে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে ওষুধ শিল্পের স্থান প্রথম সারিতে। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশ ছিল মূলত ওষুধ আমদানিকারক দেশ। গুটি কয়েক ওষুধ তৈরি হতো এদেশে। কালের বিবর্তনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ওষুধ তৈরিতে সবচেয়ে এগিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। নিজেদের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করার পরও ১৬৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ।

গত সাত বছরে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি দ্বিগুণ হয়ে ২৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা নতুন বাজার এবং উদ্ভাবনী পণ্যের যোগানের ফল। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে এই অর্জন এসেছে, যেখানে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১৩ মিলিয়ন ডলার। তবে শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞরা আত্ম বিশ্বাসী যে, এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকবে।

কারণ বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন এবং উদীয়মান বাজারে তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করছে। সাত বছর আগেও বাংলাদেশ প্রায় ১৪০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করত, যা বর্তমানে বেড়ে ১৬৬টি দেশে পৌঁছেছে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অব্যাহত বিনিয়োগ, নিয়ন্ত্রক মানদন্ড মেনে চলা এবং দক্ষ কর্মির সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালস খাত আগামী বছরগুলোতে কেবল তার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখবে না, বরং তা আরও শক্তিশালী হবে।

শিল্প বিশ্লেষকরা আরো উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস খাত ক্রমবর্ধমানভাবে তার পণ্যের পরিসরকে বৈচিত্র্যময় করছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক মানদন্ড মেনে চলে বিনিয়োগ করছে। এই কারণগুলো বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে বিদেশি বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করেছে। তারা জানান, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক কারখানা, মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাব এবং দক্ষ কর্মি ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অষ্ট্রেলিয়ার মতো বাজারে কঠোর নিয়ন্ত্রক মানদন্ড পূরণে সক্ষম করেছে।

তবে সমস্যা অন্য জায়গায় দেখা দিতে পারে আমাদের। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এটি যেমন খুশির খবর-একই সঙ্গে ঝুঁকিরও। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে শিল্পোন্নত দেশগুলো বাংলাদেশকে তাদের সহযোগী হিসেবে ভাববে।

আরও পড়ুন

আমাদের দেশ সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটবে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এতদিন উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ যে অনুকম্পা বা সুযোগ-সুবিধা পেত, তারও অবসান ঘটবে একই সঙ্গে। গত কয়েক বছর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি চললেও এ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে কিনা, তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ওষুধ শিল্প। নির্দিষ্ট কোম্পানি কাঁচামালও কিনতে হবে বেশি দামে।

মেধাস্বত্ব ছাড় সুবিধা বাতিল হলে ওষুধের দাম বাড়ার চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। এ অবস্থায় যথাশিগগির পেটেন্ট প্রোডাক্টগুলো অনুমোদন করে রাখার পরামর্শ দিয়েছে ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। নয়তো কয়েকগুণ বেশি দামে রোগীদের কিনতে হবে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ।

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ওষুধ উৎপাদনের জন্য ডব্লিউটিও থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব (পেটেন্ট) আইন মানার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ ঘোষণা করলে এ বাধ্যবাধকতা আর থাকবে না। তাই এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নেতৃস্থানীয় ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের যে সুযোগ রয়েছে তাকে কাজে লাগাতে হবে।

ওষুধ শিল্পের উন্নয়নে সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাঁচামাল উৎপাদনে নিতে হবে উদ্যোগ। যা সম্ভব হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।  বিশেষ করে গ্রামের মানুষ বা সাধারণ কৃষকের পক্ষে ঔষধি গাছ পালা উৎপাদন করে আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখা  সম্ভব হবে। ওষুধ শিল্পের সামনে যে সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে তা কাজে লাগাতে ওষুধের মানের ব্যাপারে হতে হবে আপোসহীন। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাদা পাথর লুটের দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট

রংপুরে র‌্যাবের পৃথক অভিযানে গাঁজা ফেন্সিডিল উদ্ধারসহ ৫ জন  মাদকব্যবসায়ী গ্রেফতার

ডাকসুর ভোটার তালিকা অনলাইনে, নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাড়ছে সাইবার বুলিংয়ের ঝুঁকি

নওগাঁর আত্রাইয়ে কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে, বন্যার আশঙ্কা

হার্ট অ্যাটাক করেছেন হিরো আলম