আফিফা জাহান পুষ্প
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি

সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে উঠে আসে সড়কে ঝরে যাওয়া প্রাণের মর্মান্তিক সংবাদ। এসব দুর্ঘটনা শুধু ব্যক্তির ক্ষতি করে না, বরং পুরো দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সড়কে নিহত প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে দেশের মূল্যবান সম্পদ ছিলেন, যার ক্ষতিপূরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এক জরিপে দেখা গেছে, গত বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৮,৫৪৩ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১২,৬০৮ জন, যাদের মধ্যে অনেকেই আজীবনের জন্য প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৬,৩৫৯টি, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেশ কিছু বিষয় বারবার সামনে আসে, যেমন- যান্ত্রিক ত্রুটি, প্রাকৃতিক কারণ, চালকদের অবহেলা, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, এবং দুর্বল আইন প্রয়োগ ব্যবস্থা।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ : সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। যেমন- যান্ত্রিক ত্রুটি: গাড়ির ব্রেক ফেল, টায়ারের সমস্যার মতো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাকৃতিক কারণ: কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যায়, ফলে সামনের বা পেছনের যানবাহন ঠিকভাবে দেখা যায় না।
মানবসৃষ্ট কারণ: বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চালানো ইত্যাদি। অবকাঠামোগত দুর্বলতা: সংকীর্ণ রাস্তা, পর্যাপ্ত সিগন্যালের অভাব, জেব্রা ক্রসিং না থাকা, ওয়ানওয়ে সড়কে নিয়ম ভঙ্গ করে যান চলাচল। ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের অভাব: দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ বা স্পিড সেন্সরযুক্ত ক্যামেরার সংখ্যা কম থাকায় চালকরা উচ্চগতিতে গাড়ি চালানোর সুযোগ পান।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত বিশ্বে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্পিডিং টিকেট’ ব্যবস্থার মাধ্যমে আইন লঙ্ঘনকারী চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একাধিকবার স্পিড লিমিট অতিক্রম করলে চালকদের আর্থিক জরিমানা করা হয় এবং তাদের গাড়ির বীমার কিস্তি বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশেও এ ধরনের নিয়ম চালু করা যেতে পারে, যা চালকদের আরও দায়িত্বশীল করে তুলবে।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় : সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সরকার ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো- ফিটনেসবিহীন যানবাহন নিষিদ্ধ করা ও নিয়মিত চেকআপ নিশ্চিত করা। অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ও প্রশিক্ষিত চালক তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়া। প্রতি সড়কে স্পিড সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা বসানো ও স্পিড লিমিট নির্ধারণ করা। জেব্রা ক্রসিং, ট্রাফিক সিগন্যাল ও ফুটওভার ব্রিজ বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুনসড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা। সরকার ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার ফলে যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
এছাড়া, শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করায় তরুণদের মধ্যে দায়িত্ববোধও তৈরি হচ্ছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সরকারের প্রতি আহ্বান, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি দুর্ঘটনামুক্ত, নিরাপদ সড়ক উপহার দেওয়া হোক।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
jahanafia44@gmail.com
01869-224861
মন্তব্য করুন