গাজায় চলছে গণহত্যা

প্যালেস্টাইনের গাজায় চলছে ইসরাইয়েলি বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা। গাজাবাসীদের মৃত্যুর প্রহর গণনা কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না- পরিস্থিতি এমন গাজাবাসীর সবাই যেন স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার হারিয়েছে, হারিয়েছে রাতের ঘুম। দীর্ঘ ইতিহাসে ফিলিস্তিন বহু আগেই হয়ে উঠেছে বিশ্ব মানবতার শ্মশান ভূমি। যুদ্ধের অভিঘাত কতটা মারাত্মক হতে পারে, গাজায় প্রতিদিন প্রাণঘাতী ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে প্রায় ৫৮ হাজার নারী-শিশু পুরুষ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এখনও এই হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত আছে। প্রতিদিনই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে ইহুদী সেনাদের হাতে।
গাজার পরিস্থিতি শ্বাসরুদ্ধকর। সংঘাত-সংঘর্ষ পৃথিবীর মানচিত্রকে কীভাবে বদলে দিতে পারে এবং সর্বোপরি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের জীবনের মূল্যকে কোন পর্যায়ে নেমে আনতে পারে। তা আমরা প্রত্যক্ষ করছি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া এই ভূ-খন্ড আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। প্রতি বর্গ মাইল ভূমি রক্ষার জন্য ঠিক কত সংখ্যক জীবন বলিদান করার প্রয়োজন পড়ে।
গত বছরের মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা যেন ‘নিরাপত্তা বাফার জোন’ তৈরি করছে, তার পেছনে আসলে লুকিয়ে আছে এক নির্মম কৌশল, মানুষহীন করে ফেলা, জমি দখল করা, বসবাস অযোগ্য করে তোলা। ইতোমধ্যে গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ ভূমি ইসরায়েলের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজায় প্রতিদিন ১০০ শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও দেড় লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরো অধিক হবে, সন্দেহ নেই।
তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নিহত বা আহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনও হাজার হাজার নারী-শিশু নিখোঁজ রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। গাজার নারী-শিশু পুরুষদের সঙ্গে যা ঘটছে, তা যেন সৃষ্টিকর্তার সঙ্গেই প্রবঞ্চনা করার শামিল। নিষ্পাপ, কোমলমতি শিশুদের ব্যাপারে নমনীয় ও যত্নশীল হওয়া এবং তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার ব্যাপারে বিশ্বের ধর্মগ্রন্থগুলোতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কিন্তু কে শোনে কার কথা! সমগ্র বিশ্বে শিশুদের সম্বোধন করা হয় অ্যাঞ্জেল বলে, অর্থাৎ তারা ফেরেস্তাতুল্য, কিন্তু সেই খোদা-প্রেরিত ফেরেস্তার সঙ্গে আমরা কী ধরনের আচরণ করছি? আমরা কি স্মরণে রাখছি যে, ‘আল্লাহর খলিফা, নামে অভিহিত শিশুদের সঙ্গে সেই অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে, তার সকলই তিনি দেখছেন।
আরও পড়ুনইহুদী গোষ্ঠীর বর্বরতার সব সীমা অতিক্রম করেছে। বোমার আঘাতে আকাশে উড়ছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের ছিন্নভিন্ন দেহ। ইসরায়েল সেনাবাহিনী ঠান্ডা মাথায় ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের। কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করার উপায় নেই গাজায় ইসরায়েলের এ ধরনের হাজারো পৈশাচিকতার। গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের জাতিগত নিধন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠলেও সম্পূর্ণ নীরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার।
বিশ্ব বিবেক, মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা আজ শুধু ঘুমন্ত নয়, যেন মৃত। গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে ঢাকায় মার্চ ফর গাজা র্যালিতে। এতে অংশ নেওয়া বিভিন্ন বক্তা ও অংশগ্রহণকারী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে আরব এবং মুসলিম দেশগুলোর নীরব ভূমিকার।
বিক্ষোভকারীরা মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের। মুসলিম বিশ্ব অনুধাবন করবে ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতার কথা। আমরা মনে করি যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা এবং ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধ করা না যাবে, ততদিন পর্যন্ত বিশ্বে কাক্সিক্ষত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন