স্ত্রীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্বামীর মরদেহ নিয়ে গেল প্রতিপক্ষ

নরসিংদীর রায়পুরায় স্ত্রী মর্জিনা খাতুনের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যবসায়ী তাজুল ইসলামের (৪৫) মরদেহ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে।
আজ সোমবার (৪ আগস্ট) সকাল ৯টায় উপজেলা পান্থশালা ফেরিঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
নিহত তাজুল ইসলাম সায়দাবাদ বালুচর এলাকার মৃত মোতালিব মিয়া ছেলে এবং পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন।
স্থানীয় ও নিহত তাজুল ইসলামের পরিবাবর সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুলাই উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ এলাকায় হানিফ মাস্টার ও এরশাদ মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক নারী নিহত হন। একই দিন ওই এলাকার মুদি ব্যবসায়ী তাজুল ইসলামকে আটক করে মারধর ও এক পায়ে গুলি করে হানিফ মাস্টারের অনুসারীরা। এতে গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
এর পর রবিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় তাজুলের স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা দেয়।
পরে আইসিইউ সংকটের কারণে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
আজ সোমবার (৪ আগস্ট) ভোরে তাজুলের মরদেহ নিয়ে নরসিংদীর রায়পুরায় ফিরছিলেন স্ত্রী মর্জিনা খাতুন। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি উপজেলার পান্থমালা ফেরিঘাট গিয়ে থামে।
তখন নিহতের স্ত্রীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মরদেহটি নিয়ে যান হানিফ মাস্টারের অনুসারীরা। পরে ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়।
আরও পড়ুননিহতের স্ত্রী মর্জিনা খাতুনের অভিযোগ, তার মৃত স্বামীর মরদেহটি নিয়ে থানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় হানিফ মাস্টারের অনুসারীরা তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মরদেহ নিয়ে চলে যায়। এর আগে ২১ জুলাই দাবি অনুসারে চাঁদা না পেয়ে তার স্বামী তাজুল ইসলামকে গুলি করে প্রতিপক্ষ।
এখন তারাই আবার এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
মর্জিনা বলেন, আমার স্বামী তাজুল ইসলাম ছিলেন নিরপেক্ষ। একটি মুদি দোকানের আয়ে চলত আমাদের তিন সদস্যের সংসার। স্বামীকে ছাড়া একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে এখন কিভাবে বাঁচব? এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে সায়দাবাদ এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিপক্ষ তাজুল ইসলামের মরদেহটি তার মামা প্রবাসী সেন্টু মিয়ার বাড়ি সায়দাবাদে নিয়ে যায়। সেখানে গোপনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশ আসার খবর পেয়ে বাড়িতে থাকা পুরুষ ও নারী সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ব্যাপারে হানিফ মাস্টারের অনুসারী জসিম উদ্দিন এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন। তিনি জানান, তারা এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নন।
বাঁশগাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক আতিয়ার রহমান জানান, মরদেহটি তার মামা বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে নিহতের কোনো নিকটাত্মীয় পাওয়া যায়নি। মরদেহের এক পায়ে প্লাস্টার ছিল। হাসপাতাল থেকে মরদেহটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই রায়পুরা আনা হয়েছিল। তবে নিহতের স্ত্রীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মরদেহ নেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে জানা যাবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এক বছরে সায়দাবাদ এলাকায় হানিফ মাস্টার ও এরশাদ মিয়া গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এরশাদ অনুরাসী ৭ জন এবং হানিফ অনুসারী একজন নিহত হন।
মন্তব্য করুন