জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে ‘জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা’ উদ্বোধন

ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনের দ্বিতীয় তলায় জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই ) আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংগ্রহশালা উদ্বোধন করা হয়। ‘ ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যেই এই সংগ্রহশালার প্রতিষ্ঠা। উদ্বোধনের পর ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় এক আলোচনা সভা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) এবং সংগ্রহশালা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা শফিউল আলম, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান ও ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, শহীদ আবু সাঈদের ভাই আবু হোসেন এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউট পরিচালক, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক, ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধি ও আহত শিক্ষার্থীরা। আলোচনা সভায় শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহা. রফিকুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “এই সংগ্রহশালা শুধু একটি প্রদর্শনীকেন্দ্র নয়, এটি একটি টেকসই কর্মসূচির অংশ। শহীদরা দেশের জন্য, সামাজিক বৈষম্য দূর করতে আত্মাহুতি দিয়েছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে, সারা দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছে, এবং স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “৩০ বছর পরও কোনো শিক্ষার্থী যখন এই সংগ্রহশালায় আসবে, তখন সে নিজেই প্রশ্ন করবে—এই তরুণরা কেন জীবন দিল? তখন সে বুঝতে পারবে শহীদদের আত্মত্যাগের মাহাত্ম্য।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “আজকের অনুষ্ঠান শহীদদের প্রতি জাতির ঋণ স্বীকার করার এক ছোট্ট প্রয়াস। আপাতত সীমিত পরিসরে শুরু হলেও ধীরে ধীরে এটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপ পাবে। এটি একটি জাতীয় সম্পদ। কোনো রাজনৈতিক হিংসা বা দলাদলি এই ইতিহাসকে কলুষিত করতে পারবে না।”
আরও পড়ুনতিনি ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতা উল্লেখ করে বলেন, “এগুলো আমাদের ইতিহাসের স্তম্ভ। এই ধারাবাহিকতাকে কেউ মুখোমুখি করার ষড়যন্ত্র করলে তা সফল হতে দেবো না।”
শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা বলেন, “ফাইয়াজ ছিল আমার একমাত্র সন্তান। সরকারি চাকরির কোনো আগ্রহ ছিল না তার। সে কেবল একটি বৈষম্যহীন দেশের স্বপ্নে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। বুকের মাঝখানে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়।”
শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে প্যান্টের বেল্টের নিচ দিয়ে গুলি করা হয়েছে। শুধু চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল সে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে আর কারো সন্তানের রক্ত ঝরবে না।”
শহীদ মুগ্ধর বাবা বলেন, “মুগ্ধ শুধু খাবার-পানি বিতরণ করেনি, সে মৃতদেহ গুম হওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করেছে, আহতদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। তাকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”
শহীদ আবু সাঈদের ভাই বলেন, “তাদের আত্মত্যাগ মানুষকে সাহস জুগিয়েছে। তারা যে বাংলাদেশ চেয়েছিল, সেই বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন যেন বাস্তবায়িত হয়।”
মন্তব্য করুন