তানভীরের ঘূর্ণিতে জয়ের পথে বাংলাদেশ

আজ হারলে সিরিজ খোয়াতে হবে। বোর্ডেও বেশি রান নেই। শ্রীলঙ্কার লক্ষ্য ২৪৯ রানের। তবে আশা দেখাচ্ছেন টাইগার বোলাররা, বিশেষ করে তানভীর ইসলাম। এরই মধ্যে ৪ উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের চেপে ধরেছেন তিনি। ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিক দল। জিততে হলে ১২২ বলে আরও ১১৭ রান করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।
ব্যাট হাতে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দিয়েছেন, বোলিংয়েও শুরুর আঘাতটা করেন তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই পাথুম নিশাঙ্কাকে (৫) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন টাইগার পেসার। ৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
দ্বিতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৬৯ রানের ঝোড়ো জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস আর নিশান মাদুশকা। মাদুশকাকে (১৭) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তানভীর ইসলাম।
বাঁহাতি এই স্পিনার নিজের পরের ওভারে এলবিডব্লিউ করেন ২০ বলে ফিফটি হাঁকানো কুশল মেন্ডিসকেও। ৩১ বলে ৯ চার আর ১ ছক্কায় ৫৬ রানে সাজঘরের পথ ধরেন কুশল। ৭ রানের মধ্যে ২ উইকেট তুলে নিয়ে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ।
এরপর চারিথ আসালাঙ্কাকে ৬ রানেই আউট করে দেন শামীম পাটোয়ারী। একশর আগে (৯৯ রানে) ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
কামিন্দু মেন্ডিস প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। অবশেষে লঙ্কান ব্যাটিংয়ের এই স্তম্ভ পড়েন ফঁদে। তানভীরের বলে মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫১ বলে ৩৩ রানে ফেরেন কামিন্দু। শ্রীলঙ্কার পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে ১২৬ রানে।
এর আগে ২১৮ রানে ৯ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে শেষ ব্যাটার মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে আরও ৩০ রান যোগ করেন তানজিম হাসান সাকিব। যে জুটিতে মোস্তাফিজের এক রানও নিতে হয়নি।
তানজিম সাকিব ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে একাই দলকে নিয়ে গেছেন সম্মানজনক অবস্থানে। ২১ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
আজ শনিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
প্রথম ওয়ানেডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রান করা তানজিদ হাসান তামিম আজ ব্যর্থ হয়েছেন। বাঁহাতি ব্যাটার সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন ১১ বলে ৭ রান করেই।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আসিথা ফার্নান্দোর স্লোয়ার বল কভারে খেলতে যান তানজিদ। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসের দিকে। সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিচু হওয়া বল দারুণভাবে গ্লাভসবন্দি করেন মেন্ডিস। দলীয় ১০ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
আরও পড়ুনসেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৯ বলে ১৪ রান করে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটার। ইনিংসের ১২তম ওভারে চারিথ আসালঙ্কাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছাকাছি মাহিশ থিকশানার হাতে ক্যাচ হন শান্ত।
তবে মারকুটে ব্যাটিং করে ৪৬ বলেই ফিফটি তুলে নেন পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই হাফসেঞ্চুরির দেখা পান বাঁহাতি এই ওপেনার।
তবে দারুণ এক ইনিংস খেলে লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার হন ইমন। হাসারাঙ্গার গুগলি বুঝতে পারেননি, ডিফেন্ড করেও স্টাম্প হারান এই ওপেনার। ৬৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংসে ৬ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকান ইমন।
এরপর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ২ বলে ০ রানে আউট হয়েছিলেন। এবার ১০ বলে ৯ রান করে ফেরেন মিরাজ।
ইনিংসের ২৩তম ওভারে দুশমন্থ চামিরার বলে স্কয়ার লেগ অঞ্চলে পাথুম নিশাঙ্কার হাতে ক্যাচ হন মিরাজ। দলীয় ১২৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন শামীম পাটোয়ারী। সেটও হয়েছিলেন। কিন্তু ফাঁদে পা দিয়ে বসলেন। আসিথা ফার্নান্ডোর লেগ সাইড দিয়ে বের হতে যাওয়া শর্ট ডেলিভারি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়লেন শামীম। ২৩ বলে ২ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ২২ রান।
১৫৯ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়েছেন জাকের আলী আর তাওহিদ হৃদয়। ৬১ বলে ৪৫ রান যোগ করেন তারা। জাকেরের এলবিডব্লিউয়ে ভাঙে এই জুটি। ৪০ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২৪ করেন জাকের।
হৃদয় ৬৮ বলে লড়াকু এক ফিফটি করেন, যা ছিল তার ক্যারিয়ারের অষ্টম। কিন্তু হৃদয়ের এই ইনিংসটি থেমে যায় রানআউটে। তানজিম সাকিবের সঙ্গে দুই রান নিতে চাইলে ভুল বোঝাবুঝি হয়, ননস্ট্রাইক এন্ড থেকে অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিলেন হৃদয়। ৬৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে তার ইনিংসটি ছিল ৫১ রানের।
হৃদয় ফেরার পর বলতে গেলে আর কোনো আশা ছিল না। হাসান মাহমুদ (০) আর তানভীর ইসলাম (৪) দ্রুতই আউট হলে লড়াকু পুঁজি গড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। তবে তানজিম সাকিব শেষের দিকে ঝলক দেখিয়েছেন। ব্যাটারদের মতোই দায়িত্ব নিয়ে দলকে নিয়ে গেছেন সম্মানজক অবস্থানে। শ্রীলঙ্কার পেসার আসিথা ফার্নান্ডো ৩৫ রানে শিকার করেন ৪টি উইকেট।
মন্তব্য করুন