ভিডিও শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

চালের জেলায় চা চাষ

দিনাজপুরে ১৬ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে ১৫টি চা বাগান

দিনাজপুরে ১৬ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে ১৫টি চা বাগানG ছবি : দৈনিক করতোয়া

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি : ধান-চালের জেলা দিনাজপুর। প্রতি বছর এই জেলায় উৎপন্ন হয় ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল। জেলার চাহিদা মিটিয়ে সিংহভাগ চাল পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। ধান-চালের এই জেলার সমতল ভূমিতে এখন অন্যান্য খাদ্যশস্যের পাশাপাশি উৎপাদিত হচ্ছে পাহাড়ি এলাকার ফসল ‘চা’। ‘চা’ চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছেন এই জেলার চাষীরা।

২০১৫ সালে দিনাজপুর জেলায় প্রথম চা’ আবাদ শুরু করেন জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ঝলঝলি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম। ওই বছরের আগস্ট মাসে নজরুল ইসলাম পঞ্চগড়ের একটি নার্সারী থেকে প্রতি চারা ৪ টাকা দরে মোট ৬ হাজার চা’ গাছের চারা এনে দেড় একর জমিতে রোপন করেন। রোপনের ছয় মাস পরেই প্রথম বারের মতো পাতা সংগ্রহ করেছিলেন ৫০ কেজি। আর এক বছরের মধ্যেই তিনি ওই দেড় একর জমিতে চা পাতা সংগ্রহ করেন ১ হাজার কেজি। সে সময় পঞ্চগড়ের উত্তরবঙ্গ চা কারখানায় প্রতিকেজি চা পাতা বিক্রি করেন ২৫ টাকা দরে।

সমতল ভুমিতে চা আবাদ করে এক বছরের মধ্যেই নজরুলের সাফল্য দেখে অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হন চা চাষে। এর কয়েক বছরের মধ্যেই নজরুলের পাশ্ববর্তী ব্রাক্ষ্মণভিটা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ ৭ একর জমিতে, জয়নাল আবেদীন ২ একর জমিতে এবং রফিকুল ইসলাম ৫৫ শতাংশ জমিতে চা-এর আবাদ শুরু করেন।

আব্দুল মজিদ বলেন, নজরুলের সাফল্য আর কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের অনুপ্রেরণায় আমিও প্রথমে ৩ হাজার ৫টি চা চারা এনে রোপন করেছিলাম। এখন আমার ৭ একর জমিতে চায়ের বাগান। বীরগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা বর্তমানে দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) পদে কর্মরত রয়েছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হিমালয় থেকে দিনাজপুর বেশি দূরে নয়। এই জেলার মাটি এবং জলবায়ু অনুকূল হওয়ায় এখানে চা-চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, চা চাষের মাধ্যমে এই এলাকার গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব। এদিকে বীরগঞ্জ উপজেলায় চায়ের আবাদ দেখে দিনাজপুর জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে চায়ের বাগান। বীরগঞ্জের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, বিরল ও বোচাগঞ্জ উপজেলায় চায়ের আবাদ শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোঃ আনিছুজ্জামান বলেন, দিনাজপুর জেলার ১৬ হেক্টর জমিতে ইতিমধ্যেই ১৫টি চা বাগান গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমির হোসেন জানান, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে বাংলাদেশের সিলেট এবং চট্টগ্রামে বৃহৎ পরিসরে চা বাগান গড়ে উঠে।

২০০২ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেট, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম এবং রাঙ্গমাটি জেলায় চা বাগান ছিলো। ভারতের চা উৎপাদনকারী অঞ্চল দার্জিলিং-এর কাছাকাছি বিবেচনা করে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় চা চাষের জন্য জমি ক্রয় শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠান।

এরপর ২০০২ সালে সরকার প্রকল্প গ্রহনের মাধ্যমে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হয় এবং ব্যাপকতা লাভ করে। পরবর্তীতে এটি পাশ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ের কাছাকাছি হওয়ায় ২০১৫ সাল থেকে দিনাজপুরেও চা-এর আবাদ শুরু করে কৃষকরা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারুণ্যের সমাবেশে গাড়ি পার্কিং সংক্রান্ত নির্দেশনা

ফ্লাইওভার থেকে যাত্রাবাড়ী পার্কে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৪

শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনসিপি

নওগাঁর রাণীনগরে পাখি পল্লীর পাখি উধাও

সিরাজগঞ্জে দ্রুত বাড়ছে যমুনার পানি

নাটোরের সিংড়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ১৬ টন সরকারি চাল উদ্ধার