নুসরাত ফারিয়াকে ঘিরে উত্তাল মিডিয়া

বিনোদন ডেস্ক : দেশের নন্দিত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নির্মিত বায়োপিক-এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য গ্রেফতার করার কারণে এবং পরবর্তীতে কোর্টে উঠানোর পর জেল হাজতে প্রেরণের কারণে বিশেষত ফেসবুকে মিডিয়ার অনেকেই সরব হয়ে অভিনয় শিল্পী’র পেশাদারী আচরণের প্রতি প্রশ্ন ছুড়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা সারা বিশ্বে আর কোথাও ঘটেনি বলেও আখ্যা দিচ্ছেন সবাই।
আবার এরই মধ্যে সংষ্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের বাইরে অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে কথা বলতে চাননি। তবে ফারুকী তার ফেসবুক পেজ-এ পোস্ট-এ লিখেছেন, ‘ আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুইদিন পর সেখানেই ফিরে যাবো। তিনি বলেন, নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান, প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিলো। ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলাতো অনেকদিন ধরেই ছিলো। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নারভাসনেস থেকেই হয়তোবা এসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। সেই সাথে ফারুকী আরও বলেন, কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরো সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবো-এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।’
শুধু মোস্তফা সরয়ার ফারুকীই নন সংষ্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই ফারিয়ার মুক্তি চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ‘আয়নাবাজি’ ও ‘তুফান’খ্যাত নায়িকা নাবিলা লিখেছেন,‘ আজ নুসরাত ফারিয়া মাজহারের যে ছবি এবং ভিডিওগুলি প্রচারিত হচ্ছে তা সত্যিই আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। মেয়েটাকে সেই শুরু থেকে দেখেছি। শুরু থেকেই সে আলোচনা / সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতো. সে সবসময় তার নিজের মতো করে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করত এবং সে জানত কিভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু কখনো কল্পনাও করিনি যে ওকে এভাবে দেখব! আমি জানি না কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, আমি কেবল প্রার্থনা করি এবং ন্যায়বিচার চাই। নুসরাত ফারিয়া একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সে সবসময় উঠে দাঁড়ানোর এবং ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। সে জানত না যে তার স্বপ্ন তাকে আজ এই অবস্থানে নিয়ে আসবে।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়ক সাইমন সাদিক লিখেছেন,‘ শিল্পের শিল্পীদের কোনো ঐক্য বা সংগঠন নাই নুসরাত ফারিয়া মাজহার যে বা যারা তোমার হয়ে কথা বলবে। তুমি রাজনীতির বাইরের মানুষ এটা আমাদের শিল্পীরা জেনেও যেন এক অজানা ভয়ে মুখে তালা মেরেছে। তোমার ফেরার অপেক্ষায় আছি আমি একজন সাধারণ শিল্পী। জয়ী হয়ে আসবে তুমি, হাসবে তোমার মন পরিজন।’
আরও পড়ুনপরীমণি লিখেছেন,‘ কথা হচ্ছে, কোনো কালেই কথা বলতে পারবা না মনু। ঘুমাও ঘুমাও। ঘুমই উত্তম।’ সঙ্গীতশিল্পী ক্লোজআপ তারকা রাজীব লিখেছেন,‘ শিল্পীরা সবার সাথে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। সরকারের কাজ করা যদি অপরাধ হয় তাহলে আমিও অপরাধী। গত সরকারের অনেক কাজ আমি করেছি। দেখেন কোনো মামলায় আমার নাম ঢুকানো যায় কিনা। সেটা যদি না পারেন তাহলে বড় বড় রুই কাতলাদের ধরেন। হুদাই নিরীহ মানুষদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধ করেন। দেশের উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন খুবই জরুরি। আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই তবে পরবর্তী জেনারেশন একই কাজ করবে। যা দেশকে হুমকির মুখে ফেলবে।’
ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ’। বিবৃতিতে বলা হয়, শিল্পীদের স্বার্থ ও সম্মান সংরক্ষণ করাও রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। গতকাল সোমবার বিকেলে এক বিবৃতিতে অভিনয়শিল্পী সংঘ লিখেছে, ‘সমাজ তথা রাষ্ট্রের সেবা ও স্বার্থ সংরক্ষণে অভিনয়শিল্পীরা সর্বদা সোচ্চার ও সচেতন। শুধু তাই নয়, যেকোনো মানবিক প্রয়োজনেও অভিনয়শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুতরাং, এই শিল্পীদের স্বার্থ ও সম্মান সংরক্ষণ করাও সমাজ তথা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার, মামলা ও হামলায় তৈরি হয় নানা উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা। যা শিল্পী ও তাঁর পরিবারের স্বাভাবিক জীবনাচারকে বিঘ্নিত ও অসহায় করে। পাশাপাশি সামাজিক জীবনেও তৈরি হয় নানা বিশৃঙ্খলা। তাই শিল্পীসমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার সংঘবদ্ধ চলমান অপচেষ্টা বন্ধ হোক। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে ন্যায়সংগত ও বৈষম্যহীন কর্মপন্থা প্রত্যাশা করি। আমরা সর্বদা ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
মন্তব্য করুন