নাটোরের লালপুরে লাভের আশায় সমকালীন ফসল ছেড়ে বাড়ছে তামাক চাষ

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : বেশি পরিমাণে তামাক চাষে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে ও তামাকের বিষক্রিয়ায় পরিবেশে বিরূপ প্রভাবসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তারপরও ধানসহ সমকালীন ফসল চাষে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বেশি লাভের আশায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও নাটোরের লালপুরে কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির সহযোগিতায় পরিবেশ, কৃষি ও স্বাস্থ্যের-ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছরই বাড়ছে এই উপজেলায় তামাকের চাষ। চাষিরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ায় কমছে কৃষি জমি ও ফসলের উৎপাদন।
তামাকের চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে কার্যক্রর ভূমিকা না থাকায় প্রতিনিয়ত লালপুরে তামাকের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন থেকেই যদি কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা না যায় তাহলে আগামীতে এই অঞ্চলের পরিবেশ, কৃষি ও স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এবছর লালপুর উপজেলা ৫৯ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। গত বছর এই উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়। এক বছরের ব্যবধানে তামাকের চাষ বেড়েছে ১৪ হেক্টর। তবে কৃষকরা বলছে কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যের চেয়ে এবার বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, উপজেলার আড়বাবও চংধুপইল ইউনিয়নের পকুন্দা, আব্দুলপুর, দুয়ারিয়া, এবি, দুড়দুরিয়া, কদিমচিলান এলাকায় বেশি তামাকের চাষ হয়েছে। এসব এলাকায় সমকালীন ফসলের জমির পাশে চাষ হচ্ছে তামাক। তামাক ক্ষেতর পাশে লোকালয় ও কৃষকের বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে তামাক পোড়ানোর চুল্লি।
কৃষকরা বলছেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির মাধ্যমে তামাক চাষিদের একর প্রতি জমিতে তামাক চাষের জন্য (বীজ, সার কেনার জন্য) নগদ পাঁচ হাজার দুইশ’ টাকা ও উৎপাদিত তামাক সঠিক দামে কৃষকের বাড়ি থেকে কেনার নিশ্চয়তা দেয়।
আরও পড়ুনলালপুরের চংধুপইল ইউনিয়নের পুকুন্দা মাঠের কৃষক আবুল মাজন আলী। তিনি আগে সমকালীন ফসল আখ, ধান ও গমের চাষ করতেন। কিন্তু ধানসহ উৎপাদিত ফসলের বিক্রির নিশ্চয়ত থাকে না, বাজারে ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না। ফলে লাগাতার লোকসান গুনতে হচ্ছিল তাকে। তাই সমকালীন ফসল ছেড়ে তিনি তামাক চাষ করছেন বলে দাবি তার।
চাষি আবুল মজেম আলীর ভাষ্য, অন্য ফসল চাষে বিক্রি নিশ্চিয়তা থাকে না, বাজারে সঠিক দামও পাওয়া যায় না তার সঙ্গে শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধিতে সমকালীন ফসল চাষে প্রতিবছর লোকসান গুনতে হতো তাকে। এর মাঝে গত বছর ৩০ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছিলেন তিনি। অন্য ফসলের চায়ে ভালো লাভ হওয়ায় এবার তিনি ১৮ হাজার টাকায় প্রতি বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৫০ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছেন।
কেন তিনি তামাকের চাষ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তামাকে চাষে কোম্পানি থেকে বীজ সার ও নগদ টাকা ঋণ পাওয়া যায়। তার পরে তামাক বিক্রির নিশ্চয়তার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যে সহজেই বাড়ি থেকেই তামাক বিক্রি করা যায়। লাভ ও ভালো হয় তাই তিনি স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও তামাকের চাষ করেছেন।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, তামাক কোম্পানি কৃষকদের অগ্রীম টাকা ও উৎপাদিত তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা দেওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন সময় সভা সমাবেশ করা হচ্ছে। তারপরেও অনেক কৃষক লাভের আশায় তামাক চাষ করেছেন।
মন্তব্য করুন