সোনা পাচার চক্র

প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো বিমান বন্দর কিংবা স্থল বন্দরে সোনা চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। এতে চোরাচালানিরা ধরা পড়ছে আবার কখনও তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় এসব নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও সোনা চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না।
চোরাচালানিরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আমাদের প্রশ্ন কেন সোনা চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না? দুর্বৃত্তদের অপতৎপরতাl দ্রুত রোধ করা না গেলে দেশের বন্দরগুলো ঝুঁকিতে পড়বে বলেই আমরা মনে করি।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৪ কোটি ৪০ লাখ রুপি বা ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার বেশি সোনা ও রূপা জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বিজয়পুর ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৪ কোটি ৩২ লাখ রুপির সোনা ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৮ লাখ ৩৬ হাজার রুপির রুপা পাচারকালে জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্ট ইয়ারের মুখপাত্র একে আর্য (ডিআইজি) বলেন, সোমবার (১৯ আগস্ট) বিএসএফর দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে বিজয়পুর বর্ডার ফাঁড়ির জওয়ানরা সীমান্তে দায়িত্ব পালনের সময় একজন সন্দেহজনক ব্যক্তিকে তল্লাশি শুরু করে।
এতে তার কোমরের বেল্ট থেকে ২২টি সোনার বিস্কুট, ৮টি সোনার বার এবং একটি সোনার টুকরো উদ্ধার করে। অপরদিকে একই দিনে উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার ১০২ ব্যাটালিয়ন আউটপোস্ট পানিতারে ১০ কেজি রূপার দানা জব্দ করে ভারতীয় সীমান্তবর্তী বাহিনীর সদস্যরা।
এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তের নাম মীরা দাস এবং সোমা দাস। তারা দুজনেই পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা। তারা জানান, ইতিন্দা গ্রামের অজ্ঞাত এক ব্যক্তির হয়ে কাজ করেন তারা। আটক অভিযুক্ত দুই নারী ও জব্দকৃত সোনা এবং রূপার দানা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নদীয়ার শুল্ক দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুনভৌগলিক দিক থেকে দেশের বৃহৎ স্থল বন্দর এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত চেকপোস্ট বেনাপোল স্থল বন্দরে চোরাচালানিদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। বেনাপোল হয়ে ঢাকা-কলকাতা রুটে কম খরচে এবং অল্প সময়ে যাতায়াত করেন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার যাত্রী। সোনা চোরাচালানের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চক্র এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুট দিয়ে সোনা পাচার হয়। বিষয়টি সবার জন্যই উদ্বেগের।
সোনা চোরাচালানিদের রয়েছে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। দুবর্ৃৃত্তদের সঙ্গে অনেক সময় বন্দরে কর্মকর্তাদের যোগসাজশের প্রমাণও পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করলেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে জেল হাজতে থেকে বের হয়ে এসে তারা ফের অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যায়।
এমন সংবাদ কতটা উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে এমন খবরও সামনে এসেছে, যাদের চোরাচালান রোধ করার দায়িত্ব তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবলীলায় জড়িয়ে পড়ছে সোনা চোরাচালান চক্রের সঙ্গে। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছিল গোয়েন্দারা। আমরা মনে করি সোনা চোরাচালান সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
দেশের বিমান বন্দরগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি সোনা চোরাচালান বন্ধে দেশে জুয়েলারি ব্যবসার দিকে ত্ক্ষ্মী নজর রাখা দরকার। ইতোপূর্বে আপন জুয়েলার্স থেকে ১৫ মণ সোনা উদ্ধারের ঘটনা দেশের অভ্যন্তরে এ খাতে তীক্ষ্ম নজর রাখার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। চোরাকারবারিদের প্রতি কঠোর হওয়ার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার।
মন্তব্য করুন