পোশাক রপ্তানিতে অগ্রগতি

দেশের তৈরি পোশাক খাত চলতি অর্থ বছরের (২০২৫-২৬) প্রথম দুই মাসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত জুলাই-আগস্ট মাসের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৭১৩ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৯.৬৩ শতাংশ বেশি। টেক্সটাইল খাতের মধ্যে নিটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে ৯.১১ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০.২৮ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখা একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। জুলাই-আগস্টে ইইউতে রপ্তানি হয়েছে ৩৪১ কোটি ডলারের পোশাক, যা মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ৪৭.৮২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি হয়েছে ১৪৫ কোটি ডলার, যুক্তরাজ্যে ৮৮ কোটি ২৬ লাখ ডলার এবং কানাডায় ২৪ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
বার্ষিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইইউতে রপ্তানি বেড়েছে ৬.৬০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ১২.৩৩ শতাংশ, কানাডায় ১৩.৬৯ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বেড়েছে ১৫.৫১ শতাংশ। গত এক দশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৫৮ শতাংশের বেশি। ইউরোপের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে যেখানে বাংলাদেশ থেকে ইইউতে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১১.৫৪ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের, ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৮.২৮ বিলিয়ন ইউরোতে।
অন্যদিকে ইউরোপের সামগ্রিক পোশাক আমদানি একই সময়ে বেড়েছে মাত্র ২০.৪৭ শতাংশ। এই প্রবণতা বলছে, ইউরোপে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে এবং দেশটি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) একজন সাবেক পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ এখন আর শুধু কম খরচের উৎস নয়, আমরা টেকসই উৎপাদন। পরিবেশ বান্ধব কারখানা ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আরও পড়ুনশুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টি-শার্ট রপ্তানিতেও বাংলাদেশ এখন শীর্ষে অবস্থান করছে। পাল্টা শুল্কের চাপের মধ্যেও নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস ও চীনকে পেছনে ফেলে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টিÑশার্ট রপ্তানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। পাল্টা শুল্কের চাপের মধ্যেও এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টি শার্ট রপ্তানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
নিকারাওয়া, হন্ডুরাস ও চীনের মতো টি-শার্টে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোকে পেছনে ফেলে প্রথম বার বাংলাদেশ এই শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র ১১৭টি দেশ থেকে মোট ৩৫২ কোটি মার্কিন ডলারের টি-শার্ট আমদানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গেছে ৩৭ কোটি ৩২ লাখ ডলারের টি-শার্ট। গত বছর শীর্ষে থাকা নিকারাওয়া এ সময়ে রপ্তানি করেছে ৩৬ কোটি ১২ লাখ ডলারের সমমূল্যের টি শার্ট। বাংলাদেশ এর আগে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের টি-শার্টের বাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারক ছিল না। ৩৬ বছর (১৯৮৯ থেকে ২০২৪) ধরে হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, হংকং, জ্যামাইকা, মেক্সিকো ও চীনের টি-শার্ট এই বাজারে আধিপত্য ধরে রেখেছিল। চীন ও হংকং ছাড়া পাকিস্তানে থাকা দেশগুলোর বেশির ভাগই এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির কারণে শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছিল। কিন্তু বছরের শুরুতে এই চিত্র বদলে গেছে। গত ২ এপ্রিল থেকে সব দেশের পণ্য আমদানিতে ন্যুনতম ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। তাতে শুল্ক সুবিধার আওতায় থাকা নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাসকেও টি-শার্টে ন্যুনতম শুল্ক দিতে হয়। প্রথম দফায় শুল্কের এমন চাপ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের টি-শার্ট যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রথম স্থানে উঠে আসে।
বিশ্ব অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ তার সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আরো রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্বব্যাপী যখন সরবরাহ চেইন স্বচ্ছতা ও টেকসই উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে এমনটাই বলছে পরিসংখ্যান। বাংলাদেশি পোশাক শিল্প এরই মধ্যে বিশ্বে ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে। টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব উৎপাদনকে কেন্দ্র করে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা বজায় রাখতে পারলে ইউরোপসহ বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন