সূর্য ঠিকরে পড়ছে যেন মাথার ঠিক ওপরে
রোদের তীব্রতা শুধু শরীর নয়, পুড়িয়ে দিচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন ও জীবিকাও

স্টাফ রিপোর্টার : প্রকৃতিতে মধ্য আশ্বিন চলছে। প্রবাদ আছে, আশ্বিন, গা করে শিনশিন। এই মাস থেকেই শীতের আমেজ শুরু হওয়া কথা। কিন্তু সেই আশ্বিনে সূর্য যেন দিগন্তে নয়, নেমে এসেছে মাথার ঠিক ওপরে। দিনের দাবদাহ আর তীব্র গরমে হাঁসফাঁস হয়ে উঠেছে গোটা জনপদ।
শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো লোকশূন্য হয়ে পড়ছে নিস্তব্ধ। গরমের ভয়ে ঘর ছেড়ে বের হচ্ছে না মানুষ ।খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষজন। আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ভাদ্র ও আশ্বিন মিলেই শরৎকাল। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহ থাকলেও শরৎ এ তেমন তাপদাহ থাকে না বললেই চলে। এজন্যই শরৎকে ঋতুর রাণী বলা হয়। এসময় কাশফুল ফোটে। নীলআকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। প্রকৃতিতে থাকে একটা স্নিগ্ধভাব। কিন্তু এবছর উল্টো আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই প্রবাহমান এ তাপদাহ প্রকৃতিকে রুদ্র করে তুলেছে। গরমে চারপাশ খাঁ খাঁ করছে। আজ ১২ আশ্বিন।
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আশ্বিন মাস থেকেই শুরু হয় শীতের আমেজ। কিন্তু আশ্বিনের ১১ দিন চলে গেলেও শীতের আগমন তো দূরের কথা গরম কমারই কোনো নাম নেই। উল্টো মনে হচ্ছে চৈত্র-বৈশাখের দাবদাহ চলছে। মাথার ওপর আগুন ঝরানো রোদ, পায়ের নিচে ফুটন্ত পিচঢালা রাস্তা। এই দুয়ের মাঝে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রিকশাচালক, শ্রমিক, পথচারীরা। এ গরম শুধু শরীর নয়, পুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের জীবন ও জীবিকাও। আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে আদ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ, সন্ধ্যায় আদ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ৮০ শতাংশ। এতে অসহনীয় ভাপসা গরমে গা ঘামার অস্বস্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন।
এদিকে গত কয়েকদিনে আবহমান কালের সেই ঋতু পরিবর্তনের কোনো রেশ চোখে পড়ছেনা। রোদের তীব্র তাপ ও ভ্যাপসা গরমের কারণে সবচেয়ে বিপদে খেটে খাওয়া মানুষ। সারাদিন রোদে পুড়ে রাস্তাঘাটেই যাদের ঠাঁই হয়, দিন শেষে তাদের দুর্দশার শেষ নেই। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। শিশুরা ছাড়াও গরমে কাহিল হয়ে পড়ছেন বৃদ্ধরা। এরমধ্যে আকাশে সামান্য মেঘ হলেও নামছে না ঝুম বৃষ্টি। কোন কোন দিন হালকা বৃষ্টি হলেও সকাল থেকে আবার দেখা দেয় প্রখর রোদ। ফলে গরমে মিলছে না স্বস্তি।
আরও পড়ুনগতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মাঠে গরুর ঘাস কাটার সময় বগুড়ার শিবগঞ্জ এলাকার কৃষক ফিরোজ আহম্মেদ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশংঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন। এমন অবস্থায় চিকিৎসকগণ সবাইকে ছাতা ব্যবহার করতে এবং শীতল স্থানে অবস্থান, সূতি কাপড় পরিধান করতে এবং প্রচুর পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
দুপুর ১২ টা জলেশ্বরীতলা এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক পঞ্চাশোর্ধ ইয়াকুবের সাথে। তিনি বলেন, আল্লাহ যদি এমন রোদ দেয় তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। রোদ ও গরমে রিকশা চালাতে পারছি না। রোজগার কমে গেছে। একটা যাত্রী পৌছে দিয়ে দম নিতে হচ্ছে। না হলে তেষ্টা ও গরমে মাথা ও বুক ফেটে যেতে ধরে। বৃষ্টি না হলে কষ্ট হবে তার এবং তার মত গরীব মানুষের।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস সুত্র জানায়, বগুড়ায় মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে। আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামান্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও তা তেমন ঠান্ডা করতে পারবেনা প্রকৃতিকে।
মন্তব্য করুন