মোবাইল ফোন চুরির আড়াই বছরের সাজা ভোগ করছেন ২০ বছর ধরে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটি মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে গত ২০ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের কার্ডিফের ৪৪ বছর বয়সী লেরয় ডগলাস। তবে তার বাবা অ্যান্থনি ডগলাসের অভিযোগ, তার ছেলে আসলে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে ‘আজীবন কারাদণ্ড’ ভোগ করছেন।
৪৪ বছর বয়সী লেরয় ডগলাসকে ২০০৫ সালে ডাকাতির অভিযোগে সর্বনিম্ন আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিতর্কিত ‘ইনডিটারমিনেট সেন্টেন্স ফর পাবলিক প্রটেকশন’ (আইপিপি) নামের এক অনির্দিষ্ট মেয়াদের সাজার আওতায় পড়ায় তিনি এখনো কারাবন্দি।
এই আইপিপি ব্যবস্থা ২০১২ সালে বাতিল হয়, কিন্তু এখনো বহু মানুষ এই আইনের আওতায় বন্দি রয়েছে। প্রচারকরা আইপিপি সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তির দাবিতে জাতিসংঘের কাছে যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।
বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছর রেকর্ডসংখ্যক আইপিপি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং যারা হেফাজতে রয়েছেন তাদের অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আইপিপি এক ধরনের সাজা, যেখানে প্যারোল বোর্ড যদি মনে করে মুক্তি দেওয়া নিরাপদ নয়, তবে বন্দিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা যায়।
শুরুতে এই আইন ছিল এমন অপরাধীদের জন্য, যাদের জনসাধারণের জন্য ‘উল্লেখযোগ্য’ ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর অপরাধে এই সাজা দেওয়ায় সমালোচনা বাড়তে থাকে।
প্যারোল বোর্ডের মাধ্যমে মুক্তির আগে বন্দিদের ন্যূনতম সাজা ভোগ করতে হয় এবং লাইসেন্সের শর্ত মেনে চলতে হয়, না হলে মুক্তির পরও কারাগারে ফেরত পাঠানো যেতে পারে। ৬৩ বছর বয়সী অ্যান্থনি ডগলাস জানান, তার ছেলে শৈশবে স্বাভাবিক শিশুদের মতোই ছিল, তবে সহজেই ভুল সিদ্ধান্তে প্রলুব্ধ হত।
লেরয় ডগলাস কিশোর বয়সে দোকানপাট চুরিসহ নানা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
তিনি বলেন, ২০০৫ সালে তার ছেলেকে যখন আত্মীয়ের প্রেমিকার মোবাইল ফোন চুরির জন্য দণ্ড দেওয়া হয়, তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যায়। আড়াই বছরের নির্দিষ্ট সাজা পাওয়ার বদলে তিনি আইপিপি পান। এটা পুরো পরিবারের জন্য ধাক্কা ছিল।
অ্যান্থনি ডগলাস বলেন, ‘তার আড়াই বছর শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু এত বছর পরও সে এখনো জেলে।
তিনি আশা করেছিলেন ছেলে অল্প দিনের মধ্যেই বেরিয়ে নতুন জীবন শুরু করবে। সাজা ঘোষণার পর থেকে তিনি ছেলের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারেননি, তবে নিয়মিত ফোনে কথা বলেন। জেলখানায় থাকাকালীন লেরয় ডগলাসকে তার মেয়ের মৃত্যুসহ দাদা-দাদি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মৃত্যু খবর পেতে হয়েছে। তার বাবা বলেন, এসব ঘটনায় ছেলের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব পড়েছে।
অ্যাপেক্স চেম্বার্সের ফৌজদারি ব্যারিস্টার অ্যান্ড্রু টেলর প্রায় ১০ জন আইপিপি সাজাপ্রাপ্ত মক্কেলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি এই ব্যবস্থাকে ‘কঠোর ও অন্যায্য’ বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার এমন ক্লায়েন্ট আছেন, যারা আইপিপি সাজা ছাড়া চার বা পাঁচ বছরের নির্দিষ্ট কারাদণ্ডে মুক্তির তারিখ পেতেন। কিন্তু আইপিপি মানে কার্যত আজীবন সাজা।’
তিনি সতর্ক করেন, বন্দিদের এই হতাশা কারাগারে সহিংস আচরণের জন্ম দেয়। এ ছাড়া কারাগারের জায়গার তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। কারাগারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত পুনর্বাসন, আর আইপিপি সেই নীতির বিরোধী। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০ বন্দি রয়েছেন, যারা কখনো মুক্তি পাননি বা আইপিপি স্কিমের অধীনে ফেরত পাঠানো হয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্য করুন