কোথায় গেল সেই খেলাগুলো

বেলাল হোসেন, লালমনিরহাট : দিন বদলের হাওয়ায় যেমন অনেক কিছুই হারিয়ে যেতে বসেছে, ঠিক তেমনি হারিয়ে যেতে বসেছে বিভিন্ন প্রকারভেদের গ্রামীণ খেলাধুলাও। বলতে গেলে লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলাগুলো একদম বিলুপ্তির পথে। এখানকার অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ছিল হা-ডু-ডু, ফুটবল, হ্যান্ডবল, কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্দা, লুডু, কাবাডি, বালিশ খেলা, ঘুড়ি উড়ানো ছাড়াও সাঁতার কাটা খেলা আর আগের মত চোখে পড়ে না বললেই চলে। তবে দাবিও উঠেছে।
অতীত ঐতিহ্যর এসব হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাগুলো ফিরিয়ে আনার। অথচ মাত্র ১০/১২ বছর আগেও প্রতিটি গ্রামের স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ মাঠ, এমনকি ধান কাটার পর খালি মাঠে এবং বাড়ির পাশের খালি জায়গায় পর্যন্ত চলতো বিশেষ করে হা-ডু-ডু এবং ফুটবল খেলার তীব্র প্রতিযোগিতা।
এসব খেলায় স্বর্ণ-রোপ্য দিয়ে তৈরি কাপ এমনকি ছাগল (খাসি), গরু, রঙিন টেলিভিশন পর্যন্ত উপহার দেয়া হতো। কতোই না মজা হতো যখন এক গ্রামের সাথে অন্য গ্রাম, এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমন কি বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের মধ্যে ওই সব খেলার প্রতিযোগিতা হতো। গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার উৎসুক জনতা এসব প্রতিযোগিতা দেখে কতই না আনন্দ উপভোগ করতেন। তাতে করে অপসাংস্কৃতি আর এখনকার মত মাদকের ভয়াল থাবা সেই সময়ে কাউকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সূত্র মতে, শুধু যে গ্রামে, তা কিন্তু নয়, শহরের ছোট ছোট ছেলেরাও হা-ডু-ডু এবং ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতো সেই সময়। এসব খেলায় দূর-দূরান্ত থেকে ভালো ভালো খেলোয়ারকে আনা হতো পক্ষে খেলে দেয়ার জন্য। যাকে স্থানীয় ভাষায় “হায়ার” করে আনা বলা হয়। যাদেরকে খেলার জন্য হায়ারে আনা হতো তাদের খাওয়ানো হতো জামাই আদরে এবং দেয়া হতো মোটা অংকের টাকা উপঢৌকন।
এনিয়ে কথা বলতে গেলে এক সময়ের হা-ডু-ডু খেলোয়াড় পঞ্চাশর্ধ্ব ছয়ফুল ইসলাম বলেন, আগের দিনে আমরা মৌসুমে প্রায় দিনই এ খেলা খেলতাম। আমি ভাড়ায়ও দূর-দূরান্ত গ্রামে খেলতে যেতাম। যেসব এলাকায় এ খেলার অনুষ্ঠান হতো সেই সব এলাকায় ঈদের মতো আমেজ বইতো। এখন আর আগের মতো হা-ডু-ডু খেলা দেখা যায় না। তাই তো হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি তোলার পাশাপাশি সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
মন্তব্য করুন