সেফটিপিনের ছোট্ট লুপে লুকিয়ে আছে বড় রহস্য

লাইফস্টাইল ডেস্ক : ‘সেফটিপিন’ নামেই বোঝা যায় এর কাজ ‘সেফ’ রাখা। জামার বোতাম খুলে গেলে, শাড়ির পাড় ঠিক রাখতে কিংবা ব্যাজ সাঁটাতে ছোট্ট এই ধাতব যন্ত্রটি যেন মুহূর্তেই সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। কিন্তু খেয়াল করেছেন কি, এর নিচের দিকে কয়েলের ভেতরে যে ছোট্ট লুপ বা ছিদ্রটা থাকে, সেটির আসল কাজ কী? অনেকেই ভাবতে পারেন এটা হয়তো নকশার অংশ বা কোনো ত্রুটি। আসলে এই লুপেই লুকিয়ে আছে সেফটিপিনের প্রকৃত শক্তির রহস্য।
হাজার বছরের পুরোনো যাত্রা
সেফটিপিনের গল্প নতুন নয়। এর প্রাচীন পূর্বসূরি ছিল টগল পিন, যা প্রাচীন মিসরের হিকসস জাতি ফিলিস্তিনে নিয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। টগল পিনের এক প্রান্তে থাকত ছোট লুপ, যার মধ্যে দড়ি বা সুতা ঢুকিয়ে এক অংশ পোশাকে বাঁধা হতো, আর অপর প্রান্তে সুচ ঢুকিয়ে আরেক অংশ আটকে রাখা হতো।
আরেকটি পুরোনো রূপ হলো ফিবুলা, যা অনেকটা আধুনিক ব্রোচের মতো দেখতে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৪-১৩ শতকে গ্রিসের মাইসেনীয় সভ্যতায় এটি জনপ্রিয় ছিল। টিউনিক নামের ঢিলেঢালা পোশাক আটকাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যবহার করত এই ফিবুলা।
১৮৪৯ সালে মার্কিন যন্ত্রপ্রকৌশলী ওয়াল্টার হান্ট আধুনিক সেফটিপিন তৈরি করেন। তার নকশায় ছিল দুইটি গুরুত্বপূর্ণ লুপ। উপরের লুপ: ধারালো মাথা ঢেকে রাখে, যাতে ব্যবহারকারী খোঁচা না খান। নিচের লুপ: কয়েলের ভেতরে থাকা এই অংশ স্প্রিংয়ের মতো কাজ করে, যা পিনকে টানটান ও কার্যকর রাখে।
মজার ব্যাপার হলো, হান্ট এই উদ্ভাবন করেছিলেন মাত্র ১৫ ডলারের ঋণ শোধ করতে! পিতলের তার দিয়ে তিনি প্রথম পিনটি বানান, মাঝখানে লুপ রেখে যাতে খোলা হলে আবার নিজে থেকে বন্ধ হতে পারে। পরে তিনি পেটেন্ট পান (পেটেন্ট নম্বর # ৬২৮১), যা তিনি মাত্র ৪০০ ডলারে বিক্রি করে দেন; যার মধ্যে ১৫ ডলার ঋণ শোধ করে বাকি টাকা নিজের কাছে রাখেন। সেই পিন থেকে পরবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলো কোটি কোটি ডলার আয় করে।
আরও পড়ুন
নিচের লুপের বুদ্ধিদীপ্ত কাজ
অনেকে হয়তো ভেবে নেন, নিচের ওই ছোট্ট লুপটি শুধু তারের শেষ মাথা আটকে রাখার জায়গা। কিন্তু না এটি সেফটিপিনের হৃদপিণ্ডের মতো। এই অংশই পিনের স্প্রিং টান ধরে রাখে, যা পিনকে খোলা ও আটকানোর ক্ষমতা দেয়। এই টান না থাকলে সেফটিপিন কেবল একটি ধারালো তার হয়ে থাকত, যা ব্যবহারযোগ্য নয়।
ছোট্ট নকশা, অসীম উপকার
দেখতে যতই সাধারণ লাগুক সেফটিপিনের নকশায় লুকিয়ে আছে অসাধারণ প্রকৌশল। উপরের লুপ আমাদের নিরাপদ রাখে, আর নিচের লুপ দেয় প্রয়োজনীয় শক্তি। এই দুইয়ের মিলেই সেফটিপিন আজও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য সহায়ক।
তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
মন্তব্য করুন