মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায় পোষা বিড়াল !

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিড়াল শুধু একটা প্রাণী নয়, একজন শ্রোতা, একজন বন্ধু কখনোবা নীরব থেরাপিস্ট। তার গরগর আওয়াজ, তার কোমল দৃষ্টি আমাদের অনুভব করায়, ভালোলাগা সবসময় শব্দে না, স্পর্শেও লুকিয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়িতে বিড়াল পোষার অনেক উপকারিতা আছে। পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের চেয়ে কুকুর বেশি প্রভুভক্ত হলেও উপকারিতার দিক থেকে বিড়াল উপকারী ও পরিচ্ছন্ন। এটি মানুষের মধ্যে থাকা স্ট্রেস হরমোন (কর্টিসল) কমায় এবং সেরোটোনিন, ডোপামিন ও অক্সিটোসিন হরমোন বাড়ায়, যা মন ভালো রাখে।
ব্রিটিশ লেখক মারলনের মতে, বিড়াল একটি অসাধারণ পোষা প্রাণী। এর স্বভাব শান্ত, বুদ্ধিমান এবং স্নেহশীল। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় এটি অনেকটা স্বাধীনচেতা এবং নিজেই নিজের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যত্ন নিতে পারে। ফলে প্রতিদিন এর রক্ষণাবেক্ষণে খুব বেশি সময় বা কষ্ট দিতে হয় না।
মারলন আরও বলেন, বিড়ালের থাকার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না, তাই ছোট বাসা বা অ্যাপার্টমেন্টেও এটি অনায়াসে পালনযোগ্য। বিশেষ করে যারা অ্যালার্জিতে ভুগে থাকেন, তাদের জন্য বিড়াল একটি চমৎকার পছন্দ হতে পারে, কারণ এটি তুলনামূলকভাবে কম অ্যালার্জেন সৃষ্টি করে।
পোষ্য প্রাণী হিসেবে বিড়াল শুধু সঙ্গ দেয় না, বরং মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মিডিয়াম-এ প্রকাশিত অ্যামেলিয়া কার্পেন্টারের এক প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বিড়াল স্বাস্থ্যের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম। লেখিকার ভাষায়, 'কুকুরও কিছুটা সাহায্য করতে পারে, তবে তুলনামূলকভাবে কুকুরের শরীরে দুর্গন্ধ বেশি থাকে, যেখানে বিড়াল অনেকটাই পরিচ্ছন্ন ও স্বস্তিদায়ক সঙ্গী।'
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়ালের সান্নিধ্য হৃদয়কে শুধু কোমল করে না, বরং তা হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রায় চার হাজার পাঁচশো জন নারী ও পুরুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন – যারা বিড়াল পালন করেছেন তাদের তুলনায় যারা কখনও বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটাননি, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা ৪০ শতাংশ বেশি।
২০২৩ সালে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়াল পালনকারীদের শতকরা ৮৬ ভাগ মনে করেন তাদের পোষা প্রাণী মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। জরিপ অনুযায়ী, বিড়াল মালিকরা কুকুর মালিকদের তুলনায় বেশি বলেছেন, তাদের বিড়াল মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়, সঙ্গ দেয় এবং শান্তিপূর্ণ অনুভূতি প্রদান করে। অধিকাংশ বিড়াল মালিক তাদের পোষাকে পরিবারের সদস্য হিসেবেও বিবেচনা করেন।
শহরের কংক্রিটের ভিড়ে বিড়াল যেন একটুকরো প্রকৃতি। সকালে ঘুম ভাঙানোর শব্দ, জানালার ধারে বসে রোদ পোহানো কিংবা হঠাৎ লেজ ঝুলিয়ে আদর চাওয়া সবকিছুই একঘেয়েমি ভেঙে মানুষকে অনুভব করায়, কেউ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
আরও পড়ুনফারজানা বলেন, পুষির সঙ্গে কাটানো প্রতিটা সময় আমার কাছে ভীষণ মূল্যবান। আমি যখনি ওর নাম ধরে ডাকি, ও যেখানেই থাকুক আমার কোলে গা এলিয়ে পরম শান্তিতে বসে থাকে। একটা সময় পরে মনে হতে থাকে সে যেন আমার প্রতিটা কথা বুঝতে পারে। ভালো লাগার জায়গা থেকেই একে একে ঘরে এসেছে টুসি, গুতু, রাজকুমার, যদু, সম্রাট, সুলতান, টুনি আর হুরায়রা।
'মানুষের জীবনে অনেক সময় অন্য মানুষের শূন্যতা পূরণ করে দেয় একটি বিড়াল'- কথাগুলো বলছিলেন তরুণ সাংবাদিক মরিয়ম মীম। তিনি বলেন, আমার পরিবার-পরিজন পাশে থাকলেও কলেজ জীবনে তীব্র একাকীত্ব অনুভব করতাম। কিন্তু বিড়ালের যত্ন নেওয়া, খাওয়ানো, তাদের সঙ্গ এসব কিছু আমাকে ব্যস্ত রাখতো, বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দিতো। এখন বিড়াল শুধু শখ নয়, আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তবে বিড়াল পালন করতে চাইলে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি। যেমন - নিয়মিত টিকা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পোষ্য হিসেবে যত্নের মনোভাব, ওভারঅ্যাটাচড না হয়ে সহানুভূতিশীল সম্পর্ক।
তথ্যসূত্র: এপিএ, ক্লেভল্যান্ড হার্ট ল্যাব ডট কম, মিডিয়াম ডট কম, ট্রি‑নেশন ডট কম, জিলসবেরদুগো ডট মিডিয়াম ডট কম।
মন্তব্য করুন