গোপালগঞ্জে নিহতদের মরদেহ উত্তোলনে আদালতের নির্দেশ

মফস্বল ডেস্ক: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২১ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা মরদেহ উত্তোলনের আবেদন করলে আদালত এ নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা আজ আদালতে নিহতদের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উত্তোলনের আবেদন করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। আমরা গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থানে গিয়ে নিহত রমজানের মরদেহ আগে উত্তোলন করব। এর আগে শনিবার রাতে, সদর থানার ৪ উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় চারটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে ও একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে রমজান কাজী নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০৯ জনকে। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে দুপুরে মাদারীপুরের উদ্দ্যেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দিয়ে নেতারা গোপালগঞ্জ শহরের এসকে সালেহিয়া মাদরাসার কাছে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীরা গাড়িবহরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দেয়। হামলাকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দীপ্ত সাহা (২৭) নিহতের ঘটনায় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসেন বাদী হয়ে ১৯ জুলাই গভীর রাতে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে ওই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীদের হামলার ঘটনা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটি প্রতিরোধ করতে গেলে হামলাকারীরা গুলি করে। সেখানে দীপ্ত সাহা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। সংকটজনক অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুনমোবাইল ব্যবসায়ী সোহেল রানা মোল্লা নিহতের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন একই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ। আসামী করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ জন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, লঞ্চঘাট এলাকায় হোটেল রাজের সামনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দুষ্কৃতকারীরা এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এগিয়ে এলে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। এ সময় সোহেল রানা মোল্লা (৩০) মারাত্মক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ইমন তালুকদার হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন গত ১৬ জুলাই আসামিরা শহরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দিলে দুষ্কৃতকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন তালুকদার আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
মন্তব্য করুন