ভিডিও শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

জয়পুরহাটের কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার নামে ভোগান্তি চিকিৎসক সংকটে বিপন্ন সেবা

জয়পুরহাটের কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার নামে ভোগান্তি চিকিৎসক সংকটে বিপন্ন সেবা। ছবি : দৈনিক করতোয়া

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিনদিন নাজুক অবস্থার রূপ নিচ্ছে। প্রায় দুই লাখ মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মে বিপর্যস্ত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে প্রতিদিন রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বেসরকারি ক্লিনিকের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

কাগজে-কলমে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছে মাত্র ৬ জন চিকিৎসক। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। এত সংখ্যক রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে চিকিৎসক ও কর্মরত স্টাফরা হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত রোগীরা বারবার ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল বা নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্জারি, শিশুস্বাস্থ্য, চক্ষু, নাক-কান-গলা, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, গাইনী, ডেন্টালসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে গর্ভবতী, শিশু, হৃদরোগসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্তরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। বাধ্য হয়ে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। যার খরচ যোগানো অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগ কার্যত চিকিৎসক শূন্য থাকে। ওই সময় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো), কিছু চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করেন। আইন অনুযায়ী, এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কারো চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি নেই। ফলে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসার ঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা।

আরও পড়ুন

শুধু চিকিৎসক সংকটই নয়, অন্যান্য জনবলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ১৯৪ জন কর্মচারীর মধ্যে ৯৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ফলে পরিচ্ছন্নতা, রোগী পরিবহন, ওষুধ সরবরাহ ও নার্সিং সেবাসহ প্রতিটি বিভাগে চলছে তীব্র সংকট। নার্সের অভাবে ওয়ার্ডে রোগীদের সঠিকভাবে দেখভালও হয়না। অন্যদিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে, ইসিজি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় রয়েছে। প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট না থাকায় এসব যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা পুরোপুরি বন্ধ।

সিজারিয়ানসহ জরুরি অপারেশন প্রায় ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। অনেকদিন ধরে তেলের বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটরও বন্ধ। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেই পুরো হাসপাতালে অন্ধকার নেমে আসে। আইপিএসও অকেজো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ওষুধ স্টোর থেকে উত্তোলন করা হলেও রোগীদের হাতে পৌঁছায় না। অনেক রোগী পকেটের টাকায় বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনেন।

কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালচক্র। তারা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে কমিশনের আসায় নিয়ে যাচ্ছেন ওই বেসরকারি হাসপাতালে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব উল আলম জানান,‘মাত্র কয়েকজন চিকিৎসক আর সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে প্রতিদিন শতশত রোগীকে সেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কিন্তু জনবল ও প্রযুক্তির ঘাটতির কারনে মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল

অভিনেত্রী শেফালী জারিওয়ালা আর নেই

লালমনিরহাটে ভাতিজার দা’র কোপে চাচা নিহত

বগুড়ার ধুনটে শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা শিক্ষক গ্রেফতার

এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া সেই ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার

পাবনা থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ