ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কায় সীমান্তে সতর্কতা জারী

চামড়ার দাম কম হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবৈধ পথে পাচারের আশঙ্কায় সীমান্তে সতর্কতা জারী করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি। আগামী ৭দিন দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে এই নজরদারী চালানো হবে বলে বিজিবি জানিয়েছে।
শনিবার ও রবিবার হিলির চামড়া কেনা-বেচার স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের দিন পশু কোরবানি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া কিনে আড়তে নিয়ে আসেন। গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার মূল্য ১০-১৫ টাকা বৃদ্ধি করে সরকার এলাকা ভেদে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে। সে অনুয়ায়ী মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনা শুরু করেন। কিন্তু আড়তে এসে তারা কাঙ্খিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। এতে তারা লোকসানে পড়বেন বলে জানিয়েছেন।
বিরামপুরের চামড়ার আড়তদার নাঈমুল জানান, আমাদের যতটুকু পুঁজি ছিল সেটা দিয়ে চামড়া কিনছি। বাইরের আড়তের পাইকাররা চামড়া কেনার জন্য আগাম টাকা দিতেন। এবার তারা টাকা দেননি। তাই চামড়া কিনতে সাহস পাচ্ছি না। সঠিক সময়ে ও নিয়মে চামড়ায় লবণ দেওয়া না হলে প্রচন্ড গরমে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই চামড়া ব্যবসায়ী।
এদিকে সিন্ডিকেটের ভাষ্য সঠিক নয় দাবি করে কয়েকজন স্থানীয় চামড়ার আড়তদার জানান, অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী বছরে ১/২ দিনের জন্য চামড়া কিনে ব্যবসা করেন। তারা চামড়ার গুণগত মান সম্পর্কে জানে না বলেই বেশি দামে চামড়া কিনেন। এরপরে এসে বলে লোকসান হচ্ছে। কারণ আড়তদার তো আর নিম্নমানের চামড়া টাকা দিয়ে কিনবে না। এটাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মূল সমস্যা। এখানে সিন্ডিকেট কোনো বিষয় না।
হিলির আড়তদার আকরাম ও স্বপন জানান, সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি চামড়ায় লবণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৪০০-৫০০ টাকা পড়ে। তারপরেও আমরা বেশি দামে চামড়া কিনেছি। এবার প্রচন্ড গরম। পরিশ্রমও বেশি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কিনতে পারি না। এটা সম্ভবও হয় না।
আরও পড়ুনমৌসুমী বিক্রেতা আলমাস হোসেন জানান, গ্রামে ঘুরে চামড়া কিনি। এই ঈদে এবার ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে কিনেছি। কিন্তু বিকালে হিলির আড়তে দাম শুনে হতাশ হয়েছি। চামড়া খারাপের কথা বলে প্রতিটি চামড়ায় ৮০-১২০ টাকা লোকসান হচ্ছে। যেহেতু আমাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা নাই তাই বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। লোকসান হলে কি করার আছে। ছাগলের চামড়ার তো দামই বলছে না।
হিলি ক্বাছিমিয়া মাদরাসার শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এলাকার মানুষেরা কোরবানির চামড়াগুলো আমাদের মাদরাসার এতিমদের জন্য দান করেন। কেউ এসে দেন। আবার আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করি। আমরা সেই চামড়া বিভিন্ন আড়তে বিক্রির জন্য যোগাযোগ করছি, কিন্তু সবাই দাম কম বলছে। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়। একটু বেশি দাম পেলে বিক্রি করে দিব।
স্থানীয়রা বলছেন, চামড়া বাজারের এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। পদক্ষেপ নেওয়া হলে চামড়া বাজারে সিন্ডিকেট করে কেউ চামড়া কিনতে পারবেন না। তাহলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন মৌসুমী ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে সংগ্রহকারী ব্যক্তিরা। না হলে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকে।
এদিকে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. আরিফুল দৌলা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘চামড়া দেশের রপ্তানিযোগ্য একটি পণ্য। এ কারণে বিদেশে চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হিলিসহ দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারীরা যাতে ভারতে অবৈধভাবে চামড়া পাচার করতে না পারে সেজন্য সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুধু পশুর চামড়ার পাচার ঠেকাতে নয়, সীমান্তে সবধরনের অপরাধ দমনে বিজিবি সবসময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আগামী ৭দিন সীমান্তে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে বিজিবি সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন