ভিডিও শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদতের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ

বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদতের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্তকৃত) মো. শাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের টাকায় নিজের নামে গাড়ি কেনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, কোন কারণ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে এককালীন ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নির্ধারিত কোন খাতে খরচ না করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এমপিওভূক্ত ২৫জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাক্ষরিত এক অভিযোগপত্র  গত ২০ মে ওই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) কাছে দিয়েছেন। ওই পত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসেনের আমলে প্রতিষ্ঠানে ১টি জেনারেটর, ৩০টি এসি এবং ১টি গাড়ি কেনা হয়। জেনারেটর, এসি ও গাড়ি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েছেই।

এমন পরিস্থিতিতে কয়েকদিন আগে তারা জানতে পারেন বিদ্যালয়ের ফান্ড হতে ৩৭ লাখ টাকায় কেনা গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-চ-১২-৩৭৩৫) অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসেন কৌশলে তার নিজের নামে করে নিয়েছেন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বগুড়া অফিস বিষয়টি তাদের নিশ্চিত করেছেন। তাই বিষয়টি তদন্ত করে ওই টাকা প্রতিষ্ঠান ফান্ডে জমাসহ শাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এছাড়া অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট স্কুল ফান্ড থেকে এককালীন ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করলেও কোন খাতে সেই টাকা খরচ করেছে তার কোন হিসেব পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কোষাধ্যক্ষ মো. রাজু আহম্মেদ জানান, ওই টাকা অধ্যক্ষ উত্তোলন করেছিলেন ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট, তিনি চাকরিতে যোগদান করেছেন এর দুই মাস পর নভেম্বরে।

এরও চার মাস পর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তিনি দায়িত্ব বুঝে নেন। তাই এই বিষয়ে তিনি তেমন কিছু জানেন না। তবে জুলাই অভ্যূত্থানের ক’দিন পর পরই অর্থাৎ ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসেন তার কক্ষে তাকে ডেকে নিয়ে নগদ ১০ লাখ টাকা দিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে বলেন একই সঙ্গে তিনি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছিলেন সেই জায়গায় এটি সমন্বয় করতে বলেন।

অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার নামে গাড়ি কেনার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার নামে গাড়ি কেনা ভুল হতে পারে তবে এটি উদ্দেশ্যমূলক নয়। তিনি আরও বলেন প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি কিনতে গিয়েছিলেন। গাড়ি কেনার সময় জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন পরে এজন্য আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতে হয়েছে। কিন্তু এটির সব কাগজপত্র যে আমার নামে হয়ে আছে সেটি আমি বুঝতে পারিনি।

আরও পড়ুন

প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে এক কালীন ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করে সেটি কোন খাতে খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকাটা তুলেছি আমি সেটি স্কুলের কাজেই খরচ হয়েছে। তবে কোন কোন খাতে খরচ হয়েছে সেটি সুনির্দিষ্ট করে উনি বলতে পারেননি এবং ওই অর্থ খরচের কোন ভাউচার জমা দিয়েছেন কী না এই বিষয়ে কোনো সদুত্তোরও তিনি দিতে পারেননি।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সেশন ফি ও বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়ম, প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অদক্ষতা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে রূঢ় আচরণের অভিযোগে গত মার্চ মাসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবগণ তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচির মুখে তদন্ত করে গত ২৮ এপ্রিল এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো উঠেছে।

এই বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফেরদৌস আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গাড়ির সম্পূর্ণ কাগজপত্র তার ব্যক্তিগত নাম দেখিয়ে করা রয়েছে বিষয়টি আমরা জানতাম না, ক’দিন আগেই জেনেছি। গাড়িটি যদিও স্কুলের গ্যারেজে রয়েছে তবে সব কাগজ তার নামেই আছে। এখন গাড়িটি প্রতিষ্ঠানের নামে করতে হলে উনাকে হয়তো প্রতিষ্ঠানকে দান অথবা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছেন এমনভাবে ডিড করতে হবে।

৪০ লাখ টাকার বিষয়ে ফেরদৌস আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে যে কোনো অর্থ উত্তোলন করলে রেজুলেশনের প্রয়োজন পরে, বিশেষ করে বড় অংকের  অর্থের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই লাগবে। কিন্তু ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট প্রতিষ্ঠানের এ্যাকাউন্ট থেকে যে ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এর কোনো রেজুলেশন আমরা পাইনি, এছাড়া এটাকা উত্তোলনের পরে কোন কোন খাতে খরচ হয়েছে সেটিরও কোন রশিদ আমরা পাইনি।

বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরাফাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার শাজাহানপুরে বিষাক্ত সাপের কামড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু

কুমিল্লা কারাগারে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যু

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ঈদের পর নতুন জামা কিনে দেয়ার কথা বলায় অভিমানে শিশুর আত্মহত্যা

‘স্রষ্টার মৃত্যু’ বই বাতিলের দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ৪ জুয়াড়ি গ্রেফতার

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার রোববার সরাসরি সম্প্রচার হতে পারে