ভিডিও শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে অর্ধ কোটি টাকার বেশি লোপাট

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে অর্ধ কোটি টাকার বেশি লোপাট, ছবি সংগৃহীত

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। হাসপাতালে এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এম আর আইসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার আদায়কৃত সরকারি রাজস্ব খাতের টাকা নিয়মিত রাষ্ট্রিয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়না। বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য আদায়কৃত টাকার অধিকাংশই লুটপাট হয়ে যায়। শুধু অল্প পরিমানে টাকা রাষ্ট্রিয় কোষাগারে  জমা দেয়া হয় বলে এমন অভিযোগ উঠেছে।

এ ক্ষেত্রে এক্স-রে বিভাগের ইনচার্জ এক্স-রে টেকনেশিয়ান মো. জসিম উদ্দিন ও প্যাথলজী বিভাগের ইনচার্জ মো. মোজাফ্ফর হোসেন বাদলের বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা এই দুর্নীতি করে আসছে বলে জানা গেছে। তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে তারা এই অপকর্ম করেছেন। এখনও দুর্নীতি করেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে আছেন তারা। দুর্নীতির অপরাধ প্রমাণিত হলেও শুধু জসিম উদ্দিনকে লঘুদন্ড দেয়া হয়েছে। বাদলসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: আব্দুল ওয়াদুদ আজ দৈনিক করতোয়াকে বলেন, জসিম উদ্দিন ৬২ লাখ ৬৫ হাজার ৩০ টাকা আত্মসাত করেন। তবে প্যাথলজী বিভাগের ইনচার্জ মো. মোজাফ্ফর হোসেন বাদলের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত ও অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্ত করে জসিম উদ্দিনের দুর্নীতির প্রমান পান। সেইসাথে জসিম উদ্দিন নিজেও তার অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় ঢাকায় পাঠানো অভিযোগে বলা হয়,শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক্স-রে টেকনেশিয়ান- ইনচার্জ হওয়ার পরে জসিম উদ্দিন তৎকালীন বগুড়া আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে হাসপাতালে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন। তারা বিরোধীতা করলে সহকর্মীদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বদলি করে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ অফিসিয়াল হয়রানী করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি তৃতীয় শ্রেণির সরকারী কর্মচারী হলেও অতি অল্প দিনের মধ্যে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া ব্যাংকপাড়া, ফুলদিঘী পেপসির ডিপোর পেছনে ও মালতিনগরে মোট ৩টি (তিনটি যার মধ্যে ২ইউনিটের ৫তলা ১টি ও দুই ইউনিটের ৩তলা ২টি) সুউচ্চ অট্টালিকা গড়ে তোলেন। তার এলাকায় নিজ নামে ও স্ত্রী পরিবারের সদস্যদের নামে প্রায় ১০০ বিঘা আমবাগান ও পুকুর কিনেছেন। একাধিক মোটর সাইকেল ও প্রাইভেট কারের-মাইক্রোবাসের মালিকও জসিমউদ্দিন।

অপরদিকে,প্যাথলজী বিভাগের ইনচাজ মোঃ মোজাফ্ফর হোসেন বাদল (প্যাথলজী টেকনেশিয়ান (তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদ এর সভাপতি)। তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে একনাগারে ১৫ বছর প্যাথলজী বিভাগের ইনচার্জ এর দায়িত্ব আঁকড়ে থেকে সরকারি টাকা লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেন। তিনিও আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে হাসপাতালে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন। তারা বিরোধীতা করলে উর্দ্ধতনের সহযোগিতায় সহকমীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অফিসিয়াল হয়রানী সকল ব্যবস্থা করতেন। তিনি তৃতীয় শে্িরণর সরকারী কর্মচারী হলেও অতি অল্প দিনের মধ্যে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর সম্মুখে দুই ইউনিটের চারতলা প্রাসাদ গড়ে তোলেন। নিজস্ব একাধিক মাইক্রোবাস ও এ্যাম্বুলেন্স, তার এলাকায় (নন্দীগ্রাম-বগুড়া) নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে প্রায় ৯০ বিঘা ধানী জমি ও পুকুর কিনেছেন।

আরও পড়ুন

তাছাড়া,শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বগুড়ায় বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য আদায়কৃত সরকার নির্ধারিত ফি বা টাকার সাথে অতিরিক্ত শতকরা ১০ ও ১২ টাকা হারে সার্ভিস চার্জ আদায় করা হয়। এই অতিরিক্ত শতকরা ১০ ও ১২ টাকা হারে আদায়কৃত সার্ভিস চার্জ রাষ্ট্রিয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়না। বিভাগীয় ইনচার্জ এর মাধ্যমে নাম মাত্র প্রক্রিয়ায় সার্ভিস চার্জ এর কোটি কোটি টাকা প্রকাশ্য দিবালোকে লুটপাট হয়। তবে এব্যাপারে আজ বিকেল পোনে ৪ টায় জসিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ জন্য এ ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া মোজাফ্ফর হোসেন বাদলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি হজে¦ গিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, জসিম উদ্দিন দূর্নীতি করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেলেও তার বিরুদ্ধে বড় কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে লঘুদন্ড। এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে,অত্র প্রতিষ্ঠানে ইনচার্জের দায়িত্ব পালনকালীন আপনি (জসিম উদ্দিন) আদায়কৃত সরকারি অর্থ যথাযথভাবে সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করেননি মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত হয়।

উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আপনি ৬২ লাখ পয়ষট্টি হাজার ত্রিশ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করেননি মর্মে  প্রমানিত হয়েছে এবং আপনি লিখিত জবানন্দীতে উক্ত দায় স্বীকারও করেন। তবে তাকে বড় কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরি কন্ট্রোল রুম খুলেছে ডিএনসিসি

বিসিবি সভাপতি ফারুকের মনোনয়ন বাতিল

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ৪৯ হাজার পরিবার পাচ্ছে ভিজিএফে’র চাল

কুড়িগ্রামের উলিপুরে খালার বাড়িতে বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন কজি ৩শ’ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার ১